দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিল নব্য জেএমবির সদস্য ও অনলাইনে বোমা তৈরির প্রশিক্ষক এবং কারিগর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদ হাসান ওরফে বোমা জাহিদ। গত কয়েক বছরে তার নির্দেশনায় ১০-১২টি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় নব্য জেএমবির সদস্যরা।
বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কাফরুল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জাহিদ কাতারপ্রবাসী ফোরকান, রাজু বা ফোরকান ভাই নামেও পরিচিত।
সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মান্নানের তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরীর নির্দেশনায় এবং মো. মাহমুদুজ্জামানের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয় বলে জানান সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান।
এসময় গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- সাইফুল ইসলাম মারুফ ওরফে বাসিরা ও মো. রুম্মান হোসেন ফাহাদ ওরফে আব্দুল্লাহ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক পদার্থ, জিআই পাইপ, রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, লোহার বল, সাংগঠনিক কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।
সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, অনলাইনে বিভিন্ন সিক্রেট অ্যাপ ব্যবহার করে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন ফোরকান।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ১০-১২টি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় নব্য জেএমবির সদস্যরা। বোমাগুলো ছিল একই প্যাটার্নের। যারা বোমাগুলো বানায়, তাদের বিভিন্ন সময় অভিযানে গ্রেফতার করা হয়। এর পর নতুন করে আবার মেলে একই প্যাটার্নের বোমার খোঁজ। ফলে তদন্তে নামে সিটিটিসি।
তদন্তের একপর্যায়ে উঠে আসে প্রশিক্ষক ফোরকানের নাম। তিনিই অনলাইনে বোমা বানানো শেখান।
সিটিটিসির প্রধান জানান, সর্বশেষ এই ফোরকান ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা করেছিল। ড্রোনের সঙ্গে এক্সপ্লোসিভ যুক্ত করে কোনো জায়গায় আক্রমণের পরিকল্পনার পাশাপাশি নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও সে জড়িত ছিল। আমিরের নির্দেশে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে সেসব হামলায় সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে ফোরকান।
সিটিটিসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ফোরকানের জন্ম ১৯৯৪ সালের ১২ অক্টোবর। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায়। তিনি লেমুয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। এর পর ২০১১ সালে পাথরঘাটা সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন তিনি। স্নাতক সম্পন্ন করলেও মাস্টার্স শেষ করেননি।
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, রসায়নে পারদর্শী হওয়ার কারণে তার মেধা এবং সাহসের জন্য তাকে এই সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। রসায়নের ছাত্র হওয়ার সুবাদে সে অল্পদিনে গ্রেনেড ও বোমা বানানোর কাজে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠে এবং নিত্য নতুন কৌশলে আইইডি প্রস্তুত করে। এই সংগঠনের যারা বোমা তৈরি করতো তাদেরকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিত এই ফোরকান।