সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সৈন্যরা নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করে। বিদেশি সেনারা আফগানিস্তানের মাটি ছাড়তেই আফগান বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবানের মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হয়।
অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র আর মার্কিন প্রশিক্ষণ সত্ত্বেও তালেবানের সামনে রীতিমতো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে আফগান সরকারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
আফগান বাহিনীকে পুনর্গঠনে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে আমেরিকা। তৈরি করা হয়েছে কমান্ডো ইউনিট আর বিমান বাহিনী। তবে কাড়ি কাড়ি অর্থ, প্রশিক্ষণ আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিপরীতে তুলনামূলক পুরনো সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করছে তালেবান।
গেল মাসে তালেবানের কাছে আফগান সেনাদের এমন আত্মসমর্পণের ঘটনায় সৃষ্টি হয় তোলপাড়। তালেবানের হামলার ভয়ে অনেকেই পালিয়ে যায়, পার্শ্ববর্তী দেশ তাজিকিস্তানে।
তালেবানের মুহুর্মুহু হামলার সামনে কোণঠাসা আফগান সামরিক বাহিনী। প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে, তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে আফগান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ফলাফল, দেশটির উল্লেখযোগ্য অংশের নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানের হাতে।
আফগান বাহিনীতে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা তিন লাখ। রয়েছে মাঝারি ও দূরপাল্লার কামান, সাজোয়া যান ও ইউএফভি। আমেরিকার ব্যবহৃত সামরিক সরঞ্জামই ব্যবহার করছে আফগান বাহিনী। রয়েছে কমান্ডো ইউনিটও। এর পাশাপাশি আফগান বাহিনীতে রয়েছে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারসহ ১৬৭টি এয়ারক্রাফট।
গেল কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুনর্গঠন চলে আফগান সামরিক বাহিনীর। সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে নতুন করে গড়ে ওঠে আফগান সামরিক বাহিনী, যার প্রশিক্ষণের মূল দায়িত্বে ছিল মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী। আফগানিস্তান পুনর্গঠনের বড় অংশই ব্যয় হয় দেশটির সামরিক বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে। গেল বছর প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় এই খাতে।
অন্যদিকে, তালেবানের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৮৫ হাজার। গোষ্ঠীটির বছরে ব্যয় দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো। মূলত মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পরিচালিত হয় তালেবান। সমরাস্ত্রের মধ্যে সোভিয়েত আমলের ট্যাংকের পাশাপাশি, আফগান বাহিনীর কাছ থেকে দখলে নেওয়া বিভিন্ন সাঁজোয়া যান অন্যতম। এছাড়াও স্বল্প পাল্লার কামান রয়েছে গোষ্ঠীটির কাছে।
প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক সমরাস্ত্র থাকা সত্ত্বেও, তালেবানের কাছে আফগান বাহিনীর অসহায় আত্মসমর্পণের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে মূলত সমন্বয়ের অভাব ও দুর্নীতিকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগান সেনাদের মনোবলের সংকটের পাশাপাশি রয়েছে জাতিগত বিভেদ এবং দ্বন্দ্ব।