নিজস্ব
প্রতিবেদক: দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২৩৭ জনের মৃত্যু
হয়েছে গত এক দিনে, কেবল ঢাকা বিভাগেই মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৪৪
হাজারের মত নমুনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৪২০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ
ধরা পড়েছে।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর
সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৪২ জন। তাদের মধ্যে ২৩ হাজার ৩৯৮ জনের
প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। আগের দিন মঙ্গলবার সারা দেশে ১১ হাজার ১৬৪
জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়, মৃত্যু হয় ২৬৪ জনের। সেই হিসেবে এক দিনের ব্যবধানে
শনাক্ত রোগীর আর মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই কিছুটা কমেছে।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের
হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে। এই হার আগের দিন ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ ছিল।
গত
এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৫ হাজার ১৬৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা
দিনের মোট শনাক্ত রোগীর অর্ধেক। আর এই সময়ে যে ২৩৭ জন মারা গেছেন, তাদের
১০৫ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন আরও ৫৪ জন।
দেশের
উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমের জেলাগুলোতে সংক্রমণ আর মৃত্যুর সংখ্যা
গতমাসের চেয়ে অনেকটা কমে এসেছে। তবে দেশের মধ্য আর পূর্ব অংশে এখনও চলছে
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপট।
সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১৩ হাজার ৩১৩ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা
ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৩ লাখ
পেরিয়ে যায় গত ৪ অগাস্ট। এর মধ্যে ২৮ জুলাই দেশে দিনে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০
জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮
মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১০
অগাস্ট তা ২৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জনের
মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২০ কোটি ৩৮ লাখের বেশি রোগী।
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৪৪ হাজার ৪৩০টি নমুনা
পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭১টি নমুনা।
নমুনা
পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, এ
পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মৃত্যুর হার
দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশে।
গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৩
হাজার ৩১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ১৫৭ জন,
গাজীপুরে ২৩৮ জন, গোপালগঞ্জে ১০৩ জন, কিশোরগঞ্জে ১০৯ জন, মাদারীপুরে ১৩৬
জন, মানিকগঞ্জে ১২৯ জন, মুন্সীগঞ্জে ১৮৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩০৪ জন, নরসিংদীতে
১২২ জন এবং শরীয়তপুরে ২১৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম
বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৭৭২ জন, কক্সবাজারে ১৫৮ জন, নোয়াখালীতে ২৯৬
জন, লক্ষ্মীপুরে ১০৫ জন, চাঁদপুরে ১৮৫ জন, কুমিল্লায় ৩০৯ জন এবং
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৮৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
রাজশাহী
বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৪৫ জন, সিরাজগঞ্জে ১৭১ জন; খুলনা বিভাগের
মধ্যে খুলনায় ১৩৬ জন, কুষ্টিয়ায় ১৮০ জন এবং সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় ৩১৯
জন ও মৌলভীবাজারে ১১৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৯১ জন, বরিশালে ১৫২ জন, ভোলায় ১৩৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
ঢাকা
বিভাগে গত এক দিনে যে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৫৬ জনই ছিলেন ঢাকা
জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৫৪ জনের মধ্যে ১৩ জন চট্টগ্রাম জেলার
এবং ১৭ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া খুলনা বিভাগে ২০ জন,
রাজশাহী বিভাগে ১০ জন, বরিশাল বিভাগে ৮ জন, রংপুর বিভাগে ৬ জন, সিলেট
বিভাগে ২৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত
২৩৭ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৪৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০
বছরের মধ্যে, ২৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৪ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০
বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০
বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।
মৃতদের মধ্যে ১৩৪ জন ছিল
পুরুষ, ১০৩ জন নারী। ১৭৪ জন সরকারি হাসপাতালে, ৬০ জন বেসরকারি হাসপাতালে
এবং ৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।