সবাইকে টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমরা একেবারেই সবাইকে টিকা দিতে পারব না। আমরা সাধ্যমত টিকা কিনে আনার চেষ্টা করছি। সবাই টিকা পাবেন। ধৈর্য ধরতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত ডেঙ্গু ও করোনা মহামারিতে চ্যালেঞ্জ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন (বিএসএম) ও যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে।
করোনার প্রতিষেধক টিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে এমন অভিযোগ করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘টিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে। বড় বড় দেশগুলো তাদের জনসংখ্যার ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি টিকা বানিয়ে মজুদ করেছে।’
করোনা থেকে সুরক্ষায় প্রত্যেককে আরও বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা মৃত্যুর হার কমাতে চাই। শুধু সরকার পারবে না, সবাইকে প্রয়োজন। নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের করতে হবে। বাসে-ট্রেনে গাদাগাদি করে আসলে চলবে না। তাহলে আবার সংক্রমণ বাড়বে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিবি, পক্স আগে মানুষের ছিল না। প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে অসুখগুলো আসে, এখনও আসছে। আমরা জানি যে, করোনা কোনও একটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এসেছে। স্মল পক্স প্রতিরোধ করা গেছে। কোনও এক সময় করোনাও মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ভ্যাকসিন পাচ্ছি। কোভ্যাক্স থেকে আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি, নিজেরাও কিনছি। ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে ২৬ থেকে ২৭ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে। একসঙ্গে এত ভ্যাকসিন আমরা পাব না, রাখতেও পারবো না। আমরা চেষ্টা করছি, যখন যেটা পাওয়া যায় আনার জন্য।
‘বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র ভ্যাকসিন তৈরি করেছে এবং স্টক করেছে। জনসংখ্যার চার-পাঁচগুণ বেশি ভ্যাকসিন তারা স্টক করেছে। অনেক দেশ আছে যেখানে ভ্যাকসিন পৌঁছেনি।’
তিনি বলেন, আমরা একবারে সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে পারবো না। ধৈর্য ধরতে হবে। আস্তে আস্তে সবাইকে আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি। কোটি কেটি লোক রেজিস্ট্রেশন করেছে। আমাদের যারা বিরোধী আছেন, ভ্যাকসিন যখন কম থাকে তখন বলে ভ্যাকসিন কোথায়? যখন বেশি লোক আসে, লোক বেশি কেন আসলো? না আসলেও অসুবিধা, আসলেও তাদের কাছে অসুবিধা। তাদের আমি অন্য কোনও কাজে দেখিনি। করোনার সময় মানুষের পাশে তাদের কখনও দেখিনি। মাঝে মাঝে টেলিভিশনের পর্দায় শুধু সমালোচনায় দেখেছি। সমালোচনা করা সহজ খুব।
জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের যদি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো রাখতে হয় তাহলে সংক্রমণ রোধ করতে হবে। মাস্ক পরতে মানুষের অনীহা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও আমরা দেখেছি মাস্ক পরতে চায় না। তার ফলোয়াররাও কেউ মাস্ক পরতে চায় না। আমাদের দেশে অবশ্য এটা নেই। আমাদের দেশে মানুষকে বললে সেটা শোনে। করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি কঠিন হবে। আমাদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে।
‘মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডেঙ্গু রোগী বাড়বে। হাসপাতালে জায়গা সংকুলান করতে পারছি না। এখন প্রায় সবই খুলে দেওয়া হয়েছে। জীবন-জীবিকা পাশাপাশি চলবে। জীবন বেশি গুরুত্ব। জীবনকে রক্ষা করে আমাদের জীবিকা অর্জন করতে হবে। আমরা মৃত্যুর হার কমাতে চাই। নিজেদের সুরক্ষা নিজেদের করতে হবে। সংক্রমণ অনেক বেড়েছিল, এখন কমে এসেছে। ৩২ শতাংশে উঠেছিল, গতকাল ২৩ শতাংশ দেখলাম। এই কমার হার ধরে রাখতে চাই।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এ বি এম খুরশীদ আলম, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এম ইকবাল আর্সলান, মহাসচিব এম আবদুল আজিজ প্রমুখ।