বশিরুল ইসলাম:
করোনাভাইরাস সংক্রমনের বিস্তার ঠেকাতে ঈদ-পরবর্তী টানা ১৯ দিনের
বিধি-নিষেধের পর আবারও স্বাভাবিক হয়েছে কুমিল্লার জনজীবন। বিধি-নিষেধ
শিথিলের প্রথমদিন ও দ্বিতীয়দিন (বুধ ও বৃস্পতিবার) খুলেছে সকল সরকারি ও
বেসরকারি অফিস। সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয়েছে
বাস, ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন। খুলেছে মার্কেট ও শপিং মল। পুরোদমে চালু
হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম।
গতকাল বৃহস্পতিবার
কুমিল্লা জেলার সড়কগুলো জুড়ে ছিল মানুষের ব্যস্ততা ও গাড়ির চাপ।
বিধি-নিষেধের কারণে বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়া মানুষও কুমিল্লা ছাড়ছে। আবার
কুমিল্লা জেলামুখী মানুষের চাপও বেড়েছে অনেক। তবে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত
ছিল বাস টার্মিনাল, ট্রেনস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে।
কুমিল্লা জেলার
বিভিন্ন স্থানে লকডাউন বা বিধিনিষেধ শিথিলের দ্বিতীয় দিনে সড়কগুলোতে গাড়ীর
ব্যাপক চাপ ছিল। ব্যক্তিগত গাড়ী, মোটরসাইকেল ও হালকাযানের সংগে যুক্ত হয়েছে
বাস লেগুনার মত গণপরিবহন। এতে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে। শতভাগ আসনে
যাত্রী পরিবহন করায় আগের ভাড়ায় যাত্রী আনা নেওয়া করছে পরিবহন শ্রমিকরা। তবে
গণপরিবহনে মাস্ক পরা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে উদাসীনতা ছিল। বাসে যাত্রী
তুলার ক্ষেত্রে কোন জীবানুনাশক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। সকাল থেকে দুপুর
পর্যন্ত শহরের চকবাজার, শাসনগাছা, জাঙ্গালিয়া বাসস্টেশনের মত ব্যস্ততম
এলাকা গুলোতে ছিল থেমে থেমে যানজট।
কুমিল্লার সড়কগুলোতে হকাররা ফুটপাতে
বসেছে তাদের পসরা নিয়ে। জোড়ে জোড়ে ডেকে কাস্টমারকে আকৃষ্ট করে বেচাবিক্রি
করছিল। হকার কামাল মিয়া জানান, অনেকদিন পর দোকান খুলতে পাইরা ভাললাগছে।
সকাল থেইক্কা দোকান খুইলা বইছি। ভালই কামাইছি পুলাপাইন নিয়ে দু¹া ভালোকইরা
খাইতাম পারুম।
কুমিল্লা ট্রেন স্টেশনে যথা সময়ে ট্রেন আসা-যাওয়া করলেও
যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কম ছিল। তবে ট্রেন স্টেশনে
ছিল ভীড়। শপিংমল ও মার্কেট খোলার প্রথমদিন গত বুধবারে ক্রেতাদের সমাগম
বেশি না থাকলেও গতকাল বুহস্পতিবার দোকান-পাট ও শপিংমল গুলোতে ছিল উপচে পড়া
ভীড়। কাঁচাবাজারে মানুষের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। রাজগঞ্জ ও নিউমার্কেট মাছ
বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে মাছের দাম আগের চেয়ে একটু কমলেও বেড়েছে ক্রেতাদের
সমাগম। প্রতি কেজি মাছে দাম কমেছে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম
কমেছে জাতীয় মাছ ইলিশে। প্রতি কেজি ইলিশ আগে যেখানে এক হাজার থেকে দুই
হাজার টাকা কেজি বিক্রি হতো সেখানে এখন পাঁচ শত টাকা থেকে এক হাজার টাকায়
বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা ছালাম মিয়া জানান, মাছের দাম অনেক কম। আগে
যে ইলিশ মাছ এক হাজার টাকা বিক্রি করেছি সে ইলিশ মাছ এখন পাঁচশ টাকায়
বিক্রি করছি। দুই হাজার টাকার ইলিশ মাছ বিক্রি করছি একহাজার থেকে এগারোশ
টাকায়। তারপরেও আমরা খুশি।
কান্দিরপাড় সাত্তার খান কমপ্লেক্সের সামনের
জুতা ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন পর দোকান খুলতে পেরে অনেক খুশি। দোকান পরিস্কার
করছেন আর বলছেন, গতকাল (বুধবার) দোকান খুলে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করলাম। আজও
বাকী মালামাল পরিস্কার করছি। গতকাল তেমন কাস্টমার আসেনাই। আজ (বৃহস্পতিবার)
কাস্টমার ভালই হইছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। লকডাউন না থাকলে ভালই চলতে
পারমু।
মাছ কাটুরী কামাল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন লকডাউনে থেকে অনেক ক্ষতি
হয়েছে। প্রতিদিন যেখানে একহাজার থেকে বারোশো টাকা কামাইতাম লকাডাউনে দুইশ
আড়াইশ কামাইছি। কর্মচারী দোকানভাড়া চালাইতে কষ্ট হইছে। এখন হাজার বারশো
কামাইতাম পারি। এখন আস্তে আস্তে ইনকাম বারতাছে। কর্মচারীদেরকে ভালাভাবে
বেতন দিয়া নিজেও সুন্দরভাবে চলতাম পাইরাম।
রাজগঞ্জ বাজারের দোকান মালিক
সমিতির অর্থসম্পাদক মো: আলমগীর হোসেন জানান, লকডাউন খুলে দেওয়ায় ক্রেতা
বিক্রেতাদের সমাগম বেড়েছে। সকল ব্যবসায়ীদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা
চালানোর পরামর্শ দেয়া আছে। শুধু করোনার জন্যই নয় আমি মনেকরি সব সময়
ব্যবসায়ীরা মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। নিজের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে,
নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মাস্কপড়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।