আজ পবিত্র
আশুরা। আশুরা শব্দটি এসেছে আরবি ‘আশরুন’ থেকে, যার অর্থ দশম। ইসলামের
পরিভাষায় আশুরা বলতে মহররম মাসের ১০ তারিখকেই বোঝায়। হিজরি বর্ষের প্রথম
মাস মহররম। প্রথম মাস হিসেবে মহররম যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বেশি
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আশুরা। মানব ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকে বহু
উত্থান-পতন, ভাঙা-গড়া ও ধ্বংস-সৃষ্টির ইতিহাস ধারণ করে আছে এই আশুরা। এই
দিনে আল্লাহ তাআলা আদি পিতা আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা
হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং
ফেরাউনকে সদলবলে সাগরে ডুবিয়ে মেরেছেন। ইতিহাসে এই দিনে সংঘটিত আরো অনেক
তাৎপর্যময় ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। ৬১ হিজরিতে এই দিনেই ফোরাত নদীর তীরে
কারবালা প্রান্তরে মানব ইতিহাসের নির্মমতম, সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ও
মর্মস্পর্শী ঘটনাটি ঘটে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র,
চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর পুত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) দামেস্কের
অধিপতি ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। এ ছাড়া আহলে
বাইত ও হোসাইন (রা.)-এর অনুসারীদের মধ্যে মোট ৭২ জন শহীদ হন। কারবালার
প্রান্তরে সংঘটিত সেদিনের এই নিষ্ঠুরতা আজও এই দিনটিতে সারা বিশ্বের
মুসলমানের হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে। তাই মুসলমানরা এই দিনটিতে নিজেদের ঈমানি
শক্তিতে বলীয়ান হয়। কারবালার প্রান্তরে হোসাইন (রা.) নিজের প্রাণ
বিসর্জনের মাধ্যমে অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করার যে শিা আমাদের দিয়ে গেছেন,
তা সমুন্নত রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সব রকম লোভ, মোহ ত্যাগ করে ইসলামের
প্রকৃত শিা, আদর্শ ও চেতনার বিস্তার ঘটানো।
প্রাক-ইসলামী যুগেও আশুরার
ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। সময়ের ব্যবধানে চেতনার জায়গায় আশুরা আজ ভিন্ন ভিন্ন
পরিচয় পেয়েছে। কোথাও দিনটিকে স্মরণ করা হয় শোকের স্মারক হিসেবে, কোথাও
আনন্দের উপাদান, আবার কোথাও বা প্রতিবাদের উপল হিসেবে। তাই দিবসটি পালন বা
উদ্যাপনের প্রকাশও হয় ভিন্ন ভিন্ন। হজরত মুসা (আ.)-এর অনুসারী দাবিদার
ইহুদিরা এই দিনে উপবাস করে। শিয়া সম্প্রদায় তাজিয়া মিছিল করে।
মুসলমানদের
আশুরা ও কারবালার মূল চেতনা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। সারা বিশ্বে মুসলমানরা
আজ নানাভাবে নিগৃহীত। নানা ধরনের ভ্রান্তি ও চক্রান্তের ফলে মুসলমানদের
মধ্যে বিভেদ বাড়ছে। শান্তির ধর্ম ইসলামের মূল শিা থেকে দূরে সরে গিয়ে
সহিংসতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। আশুরার এই দিনে মুসলমানদের নতুন করে শপথ নিতে
হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং সত্য ও সুন্দরের আলোকে নিজেদের
আলোকিত করতে হবে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হোক।