করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর আজ (০১ সেপ্টেম্বর) পর্যটকদের জন্য শর্তসাপেক্ষে সুন্দরবন উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে ভ্রমণকালে স্বাস্থ্যবিধিসহ অন্যান্য নিয়ম না মানলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
দীর্ঘদিন পর উন্মুক্ত হলেও সুন্দরবনে এখনও তেমন পর্যটক আসেনি। তবে তিন দিন ভ্রমণের জন্য সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ থেকে একটি জাহাজ চলাচলের অনুমতি নিয়েছে। ধীরে ধীরে সুন্দরবনে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে বলে আশা পর্যটন ব্যবসায়ীদের।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, শর্তসাপেক্ষে আজ থেকে দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দরবন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণরোধে ভ্রমণকালে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরিধান করতে হবে। ২৫ জনে গ্রুপ ভাগ করে নৌযান থেকে নামতে হবে বনে। একসঙ্গে বেশি লোক নামা ও ঘোরাফেরা করা যাবে না। এ শর্ত ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সুন্দরবন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় বিভিন্ন পর্যটন স্পট সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ করেছেন সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কারণ দীর্ঘদিন ফুট ট্রেইলার ও ওয়াচ টাওয়ারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ব্যবহার না করায় ময়লা জমেছে। এগুলোর অনেক কিছু ভেঙেও গেছে।
করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে দায়িত্বরত হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবন আজ থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার খবরে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। করমজলে যেসব সমস্যা ছিল সেগুলো সমাধান করেছি। পর্যটকরা আসামাত্রই তাদের যথেষ্ট সেবা দেওয়া হবে।
দ্য সাউদার্ন ট্যুরসের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, করোনার কারণে সুন্দরবন বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। এখন তাদের দুর্দশা কিছু ঘুচবে। সুন্দরবন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় শর্ত মেনে ট্যুর অপারেট করার সার্বিক প্রচেষ্টা চালাবো।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাজহারুল ইসলাম কচি জানান, সুন্দরবনে আসার জন্য ভ্রমণপিপাসুরা অগ্রিম যোগাযোগ করছিলেন। বন বিভাগের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সে সময় অগ্রিম বুকিং নেওয়া হয়নি। বন বিভাগের সিদ্ধান্তের পর ৩ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনের করমজলের জন্য একটি বুকিং পেয়েছেন তিনি। এখন পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা। ক্রমাগত বুকিং আসছে।
সুন্দরবন ট্যুর অপারেটর অ্যাসেসিয়েশনের খুলনা শাখার সভাপতি মঈনুল ইসলাম জামাদ্দার জানান, ট্যুর অপারেটররা জানতেন না যে ১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবন পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এ কারণে অনেক অগ্রিম বুকিং তারা ফিরিয়ে দিয়েছেন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, অক্টোবর থেকে ট্যুরের মৌসুম শুরু হবে। মূলত তখন থেকে চার মাস পর্যটকদের চাপ বাড়বে।
করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় গত ৩ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় প্রায় পাঁচ মাস পর আজ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর আগে করোনার শুরুতে গত বছরের ২৬ মার্চ প্রথম দফায় সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়।