চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি তালেবান দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর বাড়ির বাইরে আফগান নারীদের পদচারণা যেন থেমে গেছে। রক্ষণশীল সংগঠনটি প্রথম দফার শাসনামলের মতো পুরুষ আত্মীয় ছাড়া নারীদের বাড়ির বাইরে বের হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় অনেক নারীই হয়ে পড়েছেন ঘরবন্দি। চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আফগান নারীরা। নারী ব্যবসায়ীরা ব্যবসা গুটিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন ঘরের কোণে।
তবে এতো কিছুর পরও কাবুলের নারীরা নিজের মতো করে একটু সময় কাটাতে পারছেন মোহাদ্দেসা’স বিউটি সেলুনে। তালেবান কাবুল দখলের পর আর দশটা নারী উদ্যোক্তা যখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন, তখন ৩২ বছর বয়সী মোহাদ্দেসা নিজের লড়াইটা চালিয়েই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে মোহাদ্দেসা জানান, আমরা হাল ছাড়ব নাৃ..আফগান সমাজে নারীদের কাজ করাটা জরুরি। অনেক নারীই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
অবশ্য তালেবান ক্ষমতা দখলের পর কাবুলের সব ফ্যাশন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের ঝলমলে সব ছবি চাপা পড়েছে সাদা রংয়ের আড়ালে। এসব অবশ্য ঠেকাতে পারেনি মোহাদ্দেসার নিয়মিত গ্রাহকদের। ভারি পর্দায় ঢাকা পার্লারে ঢুকে তারা ঠিকই মোহাদ্দেসার কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন।
তালেবানের প্রথম দফার শাসনামলে অবশ্য বিউটি পার্লার নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি নখে নেইলপালিশ লাগানোও সে সময় গর্হিত অপরাধ ছিল বলে এএফপি জানিয়েছে।
তবে ফের ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানে ইসলামী আমিরাতের ঘোষণা দিলেও এবার তালেবান নিজেদের বিশ্ব দরবারে বেশ উদারপন্থি হিসেবেই উপস্থাপন করছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে বন্ধ থাকা বৈদেশিক সাহায্য ফিরে পাওয়ার চেষ্টা এর অন্যতম কারণ হতে পারে।
অবশ্য বাইরের বিশ্বে উদারপন্থি মনোভাব দেখালেও মোহাদ্দেসাকে হুমকি দেখাতে ভোলেনি তালেবান। এক তালেবান যোদ্ধা তার পার্লারের বাইরে এসে হুমকি দিয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন মোহাদ্দেসা।
এমনকি পার্লার বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বেনামে পাওয়া হুমকি চিঠিও বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেখিয়েছেন তিনি। মোহাদ্দেসার ধারণা তালেবান পাপ-পুণ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু তারপরও পার্লার বন্ধ করবেন না বলে জানিয়েছেন মোহাদ্দেসা।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা এসে আমার গলায় ছুরি না ধরা পর্যন্ত আমি এখান থেকে নড়ছি না।