তানভীর দিপু:
কুমিল্লায়
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খান এমপি। জেলা
প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন
কুমিল্লা সদর সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন
বাহার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও
দিনাজপুর-১ আসনের এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল, কুমিল্লা-৭ চান্দিনা আসনের এমপি
অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপল দত্ত, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস
চেয়ারম্যান সুব্রত পাল, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাষ্টি অংকুর জীৎ
সাহা। অনুষ্ঠানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম
সিরাজী, কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহম্মেদ, কুমিল্লা ইমাম সমিতির
সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শিবু
রায়সহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত
জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, জেলা পরিষদের প্যানেল মেয়র ও মহানগর
যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লা আল মাহমুদ সহিদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল
ইসলাম টুটুল, ভাইস চেয়ারম্যান তারিকুর রহমান জুয়েল, কাউন্সিলর হাবিবুর আল
আমিন সাদীসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ, সুশীল সমাজ, ধর্মীয়
নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির
বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খান বলেন, আমাদের সবাইকে
ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার যেন আর না আসতে পারেÑ একটি অপশক্তি
পরিকল্পনা করে এই অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এই পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে
শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কুমিল্লার মত ঘটনা কেন হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, কারা
করাচ্ছেÑ সব বেরিয়ে যাবে। লুকায়িত থাকবে না কিছু। সরকারের পক্ষ থেকেও আমরা
জনগণের সামনে এই ঘটনা সব তথ্য প্রকাশ করার চেষ্টা করবো।
প্রতিমন্ত্রী
আরো বলেন, স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি ছিলো যারা, যারা বঙ্গবন্ধু ও তার
পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে, ২১ আগষ্ট বোমা মেরেছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ
করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের প্রত্যেকের একে অপরের সাথে একটি সংযোগ
অদ্যাবধি রয়ে গেছে। আসলে দুষ্কৃতিকারী যারা তারা কোন ধর্মের না, তারা কোন
বর্ণের না, কোন গোত্রের না- কারোরই কিছু না। তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য
এই কাজগুলো করে যাচ্ছে। আমরা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহযোগিতায় তাদের
শনাক্ত করতে পারছি। কুমিল্লার ঘটনা অনেকটাই উদঘাটিত হয়েছে। আরো কিছু তদন্ত
চলছে।
কুমিল্লা সদরআসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি
আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবুর
রহমানের মাটিতে কেউ সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে না। এই
বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ। করোনা মহামারিতে
কুমিল্লায় আমরা সবাই একাসাথে কাজ করেছি। কেউ তো হিন্দু মুসলমান আলাদা
করিনি। আমরা একসাথেই খাদ্য সরবরাহ করেছি। আমরা কুমিল্লায় হিন্দু মুসলমান
বুঝি নাÑ আমরা মানুষ, আমরা বাঙালি। আমরা বাংলাদেশ বিনির্মাণ করছি- এই দেশে
সকলের অধিকার সমান থাকবে। এখানে কেউ অধিকার বঞ্চিত হবার সুযোগ নাই। এখানে
মাইনরিটি, ম্যাজরিটি বলার কোন সুযোগ নাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে
রক্ত দিয়েছি, তা বাঙালির রক্ত। এই রক্ত হিন্দু মুসলমান ভাগ করে দেয়নি। তাই
আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
কুমিল্লা-৭ চান্দিনা
আসনের সংসদ সদস্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, আমরা যদি মনে করি না হিন্দু ধর্ম,
না মুসলমান ধর্ম - আমরা শুধু মানুষ হবো। তাহলেই এই সাম্প্রদায়িকতা থাকবে
না। সাম্প্রদায়িকতা চাপিয়ে দিয়ে কাউকে দাবিয়ে রাখা যায় না। সবাইকে শুধু
এটাই মনে রাখতে হবে আমরা মানুষ হবো। তাহলেই এই সাম্প্রদায়িক সমস্যা মূল
উৎপাটন হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, প্রশাসনিক,
আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ইমাম সমিতি, পূজা উদযাপন পরিষদ,
সাংবাদিকরাসহ সবাই সত্য ঘটনাগুলো বলেছেন। শুধু কিছু ইউটিউবার ও ফেসবুকে
অপপ্রচার চালিয়েছে। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। সবগুলো ঘটনা
কিন্তু এখন উদঘাটিত।
পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, এই ঘটনা থেকে আমরা
এটা সতর্ক হলাম, কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করতে পারে। ঢাকা থেকে
মেধাবী ১৭ জন অফিসার চলে আসেন। দিনরাত কাজ করে সিসিটিভির ফুটেজ পেলাম এবং
দ্রুত ঘটনাটা শনাক্ত করতে পারলাম। আসামী ধরা পরলো। এজন্য প্রশাসন
আইনশৃঙ্খলাবাহিনী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকলের সহযোগিতায় পুরো ঘটনা উদঘাটনে
আমরা সফল হচ্ছি।