ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ কমছে না
Published : Saturday, 30 October, 2021 at 12:00 AM
বাজারের উত্তাপ কমেনি। এক সপ্তাহের ব্যবধানেও নিত্যপণ্যের চড়া দাম বিরাজ করছে। চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, তেলের দামে কোনও পরিবর্তন আসেনি। আকাশছোঁয়া দামে কেনাবেচা চলছে এসব পণ্যের। এর সঙ্গে এ সপ্তাহে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ডিম ও মাছের অতিরিক্ত দাম। বয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমলেও বাজার এখনও চড়া। এখনও স্বাভাবিক দরে ফেরেনি পেঁয়াজের দাম। সবকিছু মিলিয়ে জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে নিত্যপণ্যের বাজারে সাধারণ মানুষ অসহায়।
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চালের কেজি এখনও ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উন্নতমানের চিকন চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইলের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আটার কেজি ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৫৩ টাকা। পামওয়েল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। সরিষার তেল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। ময়দা ৪০ টাকা কেজি। চিনির কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ডিমের ডজন ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এ সপ্তাহে। দাম কিছুটা কমেছে বলা হলেও ১২০ টাকা কেজি দরের ব্রয়লার মুরগি এখনও বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ টাকা। এ সপ্তাহে কমেছে পেঁয়াজের দাম—এমনটি বলা হলেও এখনও ফেরেনি ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে।
রাজধানীর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪০ টাকা কেজি দরের কাঁচা মরিচ মাঝখানে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। তবে কবে নাগাদ স্বাভাবিক দামে ফিরবে তা জানেন না কেউই। পেপে ছাড়া ৬০ টাকার নিচে কোনও সবজি নাই। ৮০ টাকা কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস হিসেবে। শীতের সবজি খুব বেশি ওঠার সময় এখনও হয়নি, তারপরেও ছোট সাইজের ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা পিস হিসেবে। প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। বাজারের এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই নাকাল স্বল্প আয়ের মানুষেরা। তারপরেও কারও কাছে কোনও অভিযোগ করতে নারাজ তারা। তবে ভেতরে ভেতরে যে ক্ষুব্ধ, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে মুরগির দামও। কমতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। তবে বেশিরভাগ সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এ সময় বিভিন্ন পণ্যের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অথচ কমেছে মাত্র ৫ টাকা। ১২০ টাকার ব্রয়লার কেজিতে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে কমেছে ১০ টাকা। ৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা দাম বেড়ে ৯০ টাকা হলেও কমেছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এখনও আগের দামে ফেরেনি পেঁয়াজের দাম। কাঁচা মরিচ কেজিতে ১৬০ টাকা বেড়েছে, অথচ কমেছে মাত্র ৪০ টাকা। এখনও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। দাম কমার এই প্রবণতাকে কী বলা যায়, জানতে চাইলে মুচকি হেসে ব্যবসায়ীদের উত্তর হচ্ছে—‘কমছে তো?’
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে কেজিতে ৫ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি এবং লাল লেয়ার মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। মানভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। শীতের আগাম সবজি শিম গত সপ্তাহের মতো কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীতে বসবাসকারী বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা রফিকুল হক জানান, সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম কেজিতে ৫০ টাকা করে বেড়ে এখন ৫ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। এতে আমাদের স্বস্তি কতটুকু? শুধু তা-ই নয়—চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটার দামে তো কোনও পরিবর্তন আসেনি। এসব পণ্য কিনতে হচ্ছে অনেক চড়া দরে। এক সময় ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হতো ৫ লিটারের সয়াবিন তেল। এখন তা কিনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। ৫২ টাকার চিনি কিনতে হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। ২৮ থেকে ২৯ টাকা কেজির আটা কিনতে হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা দিয়ে। মোটকথা বাজারে গিয়ে আমরা খুবই অসহায় বোধ করি।
সরকারি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, শুধু নিত্যপণ্যের বাজারই নয়, এর প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। বেড়েছে রিকশা ভাড়া, জামাকাপড়ের দামও তো বেড়েছে। বেড়েছে বাসা ভাড়া। বেড়েছে ছেলেমেয়েদের টিউশন ফি, মাস্টারের বেতন। লেখাপড়ার প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দামও বেড়েছে। এসব যেহেতু আমরা ভোগ করি, সেহেতু এসবের দাম মেটাতে হয় বেতনের টাকা দিয়ে। কিন্তু বেতন তো বাড়েনি। যাদের আয়ে ভিন্নতা রয়েছে, তাদের বিষয়টি আসলে আলাদা বলেও জানান তিনি।
বাজারের এই চড়া দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘দৈনন্দিন জীবনের সব প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বা বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। তবে আমদানি করা নিত্যপণ্যের বাজারে অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ কোনও কাজে আসে না। কারণ, বেশি দাম দিয়ে ব্রাজিল থেকে সয়াবিন এবং মালয়েশিয়া থেকে পামওয়েল কিনে এনে কোনও ব্যবসায়ী কম দামে বিক্রি করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে দেশের সাধারণ মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে আমদানি পণ্যের শুল্ক কমিয়ে দাম স্বল্প আয়ের মানুষের আয়ত্তে রাখার চেষ্টা করছি। সে ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে সরকার টিসিবির মাধ্যমে সয়াবিন, পেঁয়াজ, ডাল, চিনি বিক্রির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এতে কিছুটা হলেও মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে।’