হাজতবাস বাদ দিয়ে সাজার মেয়াদ কার্যকরের নির্দেশ সর্বোচ্চ আদালতের
Published : Tuesday, 2 November, 2021 at 12:00 AM
যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে হাজতবাসের সময় বাদ দিয়ে দোষী ব্যক্তির সাজার মেয়াদ হিসাব করার যে বিধান ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ক ধারায় আছে, তা যথাযথ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
ওই ধারা অনুযায়ী, অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি দণ্ডিত হওয়ার আগে থেকে যদি হাজতে থাকেন, তবে বিচারিক আদালত তাকে দণ্ড দেওয়ার সময় হাজতবাসের সময়টুকু বাদ দিয়ে কারাভোগের মেয়াদ গণনা করবেন।
আর হাজতবাসের মেয়াদ যদি দণ্ডের মেয়াদকে এর মধ্যেই ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে হবে।
এ ধারাটির যথাযথ বাস্তবায়নে কারা মহাপরিদর্শককে দেশের প্রত্যেক কারাগারে নির্দেশনা জারি করতে বলা হয়েছে।
৩৪ বছর ৬ মাস ধরে কারাগারে থাকা যাবজ্জীবনে দণ্ডিত ব্যক্তির হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ-টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে সোমবার এ রায় দিয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল। তার সঙ্গে ছিলেন মোহাম্মদ রায়হান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
আইনজীবী গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল সাংবাদিকদের বলেন, জোড়া খুনের মামলায় নাটোরের ইউনুছ আলী হাই কোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। জেলকোড অনুযায়ী ৯ মাসে বছর; যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর। এ মামলায় আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে ১৯৯৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ইউনুছ আলী গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে। অর্থাৎ প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি কারাগারে আছেন। আর জেলকোড অনুযায়ী ৩৪ বছরের উপরে।
“মানে হল, ইউনুছ আলী যাবজ্জীবন সাজা খেটে চার বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। যে কারণে আপিল বিভাগ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫-ক ধারার যথাযথ বাস্তবায়ন বা অনুসরণের জন্য এ নির্দেশনা দিয়েছে।”
তবে ইউনুছ আলীর মুক্তির বিষয়ে আদেশে কিছু বলা হয়নি। এবিষয়ে আইনজীবীদের কাছ থেকেও সরাসরি কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
মেশিনে ধান ভাঙানোর সময় মামুলি বিষয়কে কেন্দ্র করে ঝগড়া ও হাতাহাতির পর ১৯৯৫ সালের ১১ নভেম্বর খুন হন নাটোরের আব্দুল আজিজ ও আব্দুল গফুর খুন হন। এ ঘটনায় আজিজের বাবা আব্দুর রহমান বাদি হয়ে নাটোর সদর থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
এ মামলায় ২০০২ সালে ১৭ নভেম্বর নাটোরের বিচারিক আদলত ১০ আসামির মধ্যে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৮ আসামিকে যাবজ্জীবন দেয়। বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই জনের মধ্যে ইউনুছ আলী একজন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ইউনুছ আলী হাই কোর্টে আপিল করেন। ২০০৫ সালে হাই কোর্টের রায়ে ইউনুছ আলীর যাবজ্জীবন হয়। হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আর আপিল করেননি ইউনুছ আলী।
দেরির জন্য মার্জনার ও জামিনের আবেদনসহ হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ-টু আপিল করেন যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করে ফেলা এ ব্যক্তি।
সোমবার ইউনুছ আলীর এ লিভ-টু আপিলে পর্যবেক্ষণে দিয়ে খারিজ করে দিল সর্বোচ্চ আদালত।