ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
দেবিদ্বারে মারাত্মকভাবে বেড়েছে শব্দদূষণ
হাইড্রোলিক হর্নে বিপর্যস্ত জনজীবন
Published : Tuesday, 2 November, 2021 at 12:00 AM, Update: 02.11.2021 1:14:54 AM
হাইড্রোলিক হর্নে বিপর্যস্ত জনজীবনশাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
কুমিল্লার দেবিদ্বারে ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা ও সিএনজির হাইড্রোলিক হর্নের উচ্চশব্দে মারাত্মকভাবে বেড়েছে শব্দদূষণ। পৌর সদর এলাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল নয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত হাজার হাজার বাস, ট্রাক্টর, অটোরিক্সা ও সিএনজি চলাচল করে। এসব যানবাহনের অধিকাংশই হাইড্রোলিক উচ্চ শব্দের। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পথচারী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা।
নিউইর্য়াক প্রবাসী ডা.ফেরদৌস খন্দকার শব্দ দূষণের ক্ষতিকর সম্পর্কে বলেন, উচ্চমাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি ও স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। কানে শোনার ক্ষমতা কমে যায়, ঘুম কম হয়, বিরক্তির মাত্রা বেড়ে যায়। শব্দের কারণে শিশুদের শেখার ক্ষমতা কমে যায়। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদিও হয় দীর্ঘ মেয়াদে।
সোমবার সকালে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও এসএ সরকারি কলেজ রোডে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট বড় বিভিন্ন যানবাহনের লম্বা জট। জট খুলতেই একসঙ্গে তীব্র হর্নের আওয়াজ। চোখের দেখায় বাস-মিনিবাস অটো, সিএনজি ও মোটরবাইক হর্ন বাজাতে বাজাতে সামনের দিকে চলছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পথচারী, ব্যবসায়ী ও স্কুলগামী শিশুরা।
২০০৬ সালের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী, কোথাও কোনো হাসপাতাল থাকলে সেটি ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর ‘নীরব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না’।
কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের এক পাশে সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অন্যপাশে আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালসগ গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ হাসপাতাল গুলোতে শত শত রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নেন। মুমূর্ষু রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। কিন্তু নানা রকম যানবাহনের মুহুর্মুহু হর্নের আওয়াজে রোগীদের অবস্থা বিপর্যস্ত।
শব্দ দূষণ আইনের বিধিতে বলা আছে, নীরব এলাকায় হর্ন বাজালে প্রথমে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। আবার নিয়ম ভাঙলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা জরিমানা করা হবে। কিন্তু দেবিদ্বারে এর প্রয়োগ হয় না বললেই চলে।
‘স্বাস্থ্যে শব্দের প্রভাব’একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে, হঠাৎ শব্দে (ইমপালস সাউন্ড) ও দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ শব্দের (৭৫থেকে ৮৫ ডেসিবেল) মধ্যে থাকলে মানুষ শ্রবণক্ষমতা হারাতে পারে। কারণ, এতে কানের কোষ (সেল) মারা যায়। কানের কোষ মারা গেলে তা মনোযোগের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এই কোষ নতুন করে আর তৈরি হয় না।
উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মুরাদনগর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মো.কবীর হোসেন বিরক্ত হয়ে বললেন, দেবিদ্বারে চিকিৎসা নিতে এসে মাথায় যন্ত্রণা নিয়ে ফিরছি। গাড়ির হর্নের শব্দ মাথার মগজে ঢুকে আছে। এটা তো ভাই কোন জীবন হতে পারে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার  কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, বেশির ভাগই  চালকদের প্রশিক্ষণ নেই। তারা রাস্তায় অহেতুক হর্ন বাজান। এতে মারাত্মকভাবে বেড়েছে শব্দ দূষণ। শিশুসহ সব বয়সী মানুষের শ্রবণ শক্তি দিন দিন কমছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)  মো. আশিক উন নবী তালুকদার বলেন, হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের জন্য কারও কাছ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি। লিখিত কোন অভিযোগ পেলে হাইড্রোলিক হর্ন যারা বাজায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।