বাংলাদেশ
একটি ছোট্ট ভূখণ্ড, অথচ রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা। প্রতিনিয়ত মানুষ বাড়ছেই।
বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। উল্টো দিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাসন চাহিদা
মেটাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত কমছে কৃষিজমির পরিমাণ। শুধু আবাসন চাহিদা নয়,
শিল্প-কারখানা, ইটভাটা, রাস্তাঘাট, বিনোদনকেন্দ্র , হাট-বাজারসহ আরো অনেক
কারণেই কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে,
প্রতিবছর প্রায় ১ শতাংশ কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন,
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের একটি বড়
অংশ তলিয়ে যেতে পারে। তার আলামত এখনই দেখা যাচ্ছে। জোয়ারের পানিতে উপকূলীয়
নিম্নাঞ্চল ক্রমে বেশি করে তলিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আছে নদীভাঙন, মরুকরণ
প্রক্রিয়াসহ অনেক প্রাকৃতিক কারণ। তাহলে এই ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমির উৎপাদিত
শস্য দিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা আমরা কত দিন মেটাতে পারব?
কৃষিবিজ্ঞানী ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণাকারী বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশ
ক্রমেই এক ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে কৃষিজমি হ্রাসের
এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা রোধ করতে হবে। অথচ বাস্তবে ঘটছে উল্টোটা। গতকালের
কালের কণ্ঠে এমনি একটি উদ্বেগজনক খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়, শুধু
চট্টগ্রামে গত এক দশকে কৃষিজমি কমেছে ৩৭ হাজার একরের বেশি এবং কৃষিজমি কমার
এই ধারা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
জনসংখ্যা সারা দুনিয়ায়ই বাড়ছে। বর্ধিত
জনসংখ্যার আবাসন চাহিদা মোকাবেলা করতে উন্নত দুনিয়ায় নানা ধরনের পরিকল্পিত
উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তার একটি হচ্ছে উল্লম্ব বা বহুতল আবাসন ব্যবস্থা।
কিন্তু বাংলাদেশে আবাসন বাড়ছে আনুভূমিকভাবে বা সমতলে। এতে দ্রুত কমছে
কৃষিজমি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের এক হিসাবে দেখা গেছে, এখানে
বর্তমানে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ দুই লাখ ৫১ হাজার ৬৮১ হেক্টর বা ছয় লাখ ২৯
হাজার ২০২.৫ একর। তাতে দেখা যায়, এক দশকে ৩৭ হাজার একরের বেশি আবাদি জমি
কমেছে। এভাবে কৃষিজমি কমছে সারা দেশেই। ইটভাটাও এ ক্ষেত্রে বড় প্রভাব
রাখছে। একটি ভাটা তৈরিতে তিন একরের বেশি জমির প্রয়োজন হয়। জেলায় এ রকম ভাটা
রয়েছে শত শত। শুধু রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়ই ভাটা রয়েছে ৭০টি। এসব ভাটায় ইট
তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি। ফলে সেসব জমির
উর্বরতা বা উৎপাদনশীলতাও কমে যায়।
জনসংখ্যার ভবিষ্যৎ খাদ্য চাহিদা
কিভাবে মেটানো হবে, তা এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। আর সেখানে কৃষিজমি
হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা
বৃদ্ধিসহ যেসব প্রাকৃতিক কারণে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে তা রোধ করা আমাদের পক্ষে
প্রায় অসম্ভব। কিন্তু অপরিকল্পিত আবাসন বৃদ্ধিসহ অন্য যেসব কারণে কৃষিজমি
নষ্ট হয় সেগুলো আমাদের কমাতেই হবে। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত
পদক্ষেপ নেবে।