
দেশে
খুনখারাবি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধই দ্রুত বাড়ছে। জিরো টলারেন্স
সত্ত্বেও বাড়ছে মাদকের কারবার। কিশোররাও জড়িয়ে পড়ছে খুনখারাবিসহ নানা রকম
অপরাধ তৎপরতায়। বাড়ছে চোরাচালান, নারী-শিশুসহ মানবপাচার, সাইবার অপরাধসহ
আরো অনেক অপরাধ। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে অপরাধ তৎপরতায়
আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও
ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এসব সহিংসতায় আগের তুলনায় অনেক বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের
ব্যবহার হয়েছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, দুই ধাপের ইউপি
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় গত সোমবার পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৬ জন, যার
মধ্যে ২১ জনই নিহত হয়েছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে। এই ২১ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন
নিহত হয়েছেন পুলিশের গুলিতে। এই অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অবৈধ
আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি কিভাবে এত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সহিংসতায় কারা জড়িত, বৈধ কোনো
অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে কি না—এসব বিষয়ে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্যও চেয়েছে
মন্ত্রণালয়। যেখানে পুলিশ গুলি চালিয়েছে, সেখানে নির্বাহী তদন্তের মাধ্যমে
গুলি চালানোর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ছিল, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
দেশে
যেভাবে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে, অপরাধে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার
হচ্ছে—তাকে অনেকেই অশনিসংকেত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর
থেকে জানা যায়, পূর্বাঞ্চলে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পরিমাণে
অবৈধ অস্ত্র আসছে। সম্প্রতি কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল
(সিটিটিসি) ইউনিট ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে পাঁচটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র
এবং ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে একে-৪৭ রাইফেলের গুলিও রয়েছে।
একই সঙ্গে চারজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রুপটি অনেক
দিন ধরেই ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আসা অস্ত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িত
ছিল। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যেসব গোষ্ঠী সন্ত্রাস সৃষ্টির
মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তারাও অস্ত্র সংগ্রহ করছে। সাম্প্রতিক
সময়ের সংঘাত-সহিংসতার সঙ্গে তারাও জড়িত থাকতে পারে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে
ছাত্রশিবিরের আস্তানা এবং বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানা থেকে একে-৪৭ রাইফেলসহ
প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এবারের ইউপি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি
সহিংসতা হয়েছে নরসিংদী ও কক্সবাজার জেলায়। নরসিংদীতে নিহত হয়েছেন ৯ জন এবং
কক্সবাজারে নিহত হয়েছেন পাঁচজন। জানা যায়, নরসিংদীতে স্থানীয়ভাবে তৈরি
আগ্নেয়াস্ত্রেরও ব্যবহার হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাইপ কেটে বানানো এমন
তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারও করেছে। পাশাপাশি একটি একনলা বন্দুকও উদ্ধার করা
হয়েছে। এর আগেও চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র
তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।
অতীতে আমরা দেশে ভয়ানক জঙ্গি
তৎপরতা দেখেছি। রাজনৈতিক সন্ত্রাস দেখেছি। সারা দেশে একযোগে বোমা হামলার
পাশাপাশি আদালতেও হামলা হতে দেখেছি। আমরা চাই না দেশে আবার তেমন পরিবেশ
ফিরে আসুক। এ জন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী অভিযান আরো জোরদার করার
পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আসা বন্ধ করতে হবে।