কুমিল্লার দেবিদ্বারে চাঞ্চল্যকর শিশু ফাহিমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ফাহিমার বাবা আমির হোসেনসহ গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ ঘাতকের বিচারের চাইলেন তাদের পরিবার। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ঘাতক বাবা মো. আমির হোসেন (২৫), মো. রবিউল আউয়াল (১৯), মো. রেজাউল ইসলাম ইমন (২২), মোসা. লাইলি আক্তার (৩০) ও মো. সোহেল রানা (২৭)। ঘাতক পাঁচ আসামীর বাড়ি দেবিদ্বার পৌর এলাকার চাপানগর গ্রামে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘাতক পাঁচ আসামীকে কুমিল্লা জেল হাজতে প্রেরণ করেন দেবিদ্বার থানা পুলিশ।
এদিকে, ঘাতক আমির হোসেনের মা নাছিমা বেগম শিশু ফাহিমার হত্যাকারীদের বিচার চাইলেন। তিনি বলেন, আমার বুকে আগলে রেখে লালন পালন করেছি ফাহিমাকে। আমার ঘরে এ একটি মাত্রই শিশু। সে আমার কোল থেকে কেড়ে নিছে, এমন পাষণ্ড ছেলের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। ফাহিমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত আমার ছেলে আমিরের ফাঁসি দাবি জানাই।
শিশু ফাহিমার মা হোসনেয়ার বেগমও ঘাতক স্বামী আমির হোসেনের ফাঁসি দাবি জানান। তিনি বলেন, বাবা হয়ে নিজের মেয়েকে কেউ এভাবে মারতে পারে না, আমি আমার স্বামীসহ যারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের সকলের ফাঁসি চাই। তিনি আরও বলেন, ফাহিমা নিখোঁজের পর আমার স্বামী আমাকে মিথ্যা শান্তনা দিতে থাকে, আমার মেয়েকে নাকি কবিরাজ ফিরিয়ে এনে দিবে। সে কিভাবে আমার অবুঝ সন্তানকে মেরে ফেলল।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে হত্যা প্ররোচনাকারী লাইলি আক্তারের স্বামীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। লাইলি আক্তারের তিন অবুঝ শিশু মেয়ে মাকে দেখার জন্য হাহাকার আর্তনাদ করছে। তিন শিশুর এমন আর্তনাদে উপস্থিত সকলেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। লাইলি আক্তার ৫ বছরের মেয়ে নুসরাত ফাহিমার ছবি দেখিয়ে এ প্রতিবেদকে বলে, ফাহিমা আমার খেলার সাথি ছিলো, আমার মা ফাহিমাকে মেরে ফেলেছে। হত্যাকারী রবিউলের মা খোরশেদা বেগম, রেজাউলের মা জাহানারা বেগম এবং সোহেল রানার মা রফেজা বেগমও শিশু ফাহিমা হত্যায় জড়িত ঘাতক সন্তানদের ফাঁসি চান। তারা বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। মানুষ হত্যাকারী আমার সন্তান হতে পারে না।
চাপানগর এলাকার হোমিও চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধিক এলাকাবাসী জানায়, আশ পাশের সকল শিশু শঙ্কায় রয়েছে। তারা তাদের বাবার সাথে কোথাও বের হচ্ছে না, এক নারী বলেন, আমার চার বছরের মেয়ে তার বাবার কাছে যাচ্ছে না, বাবা ডাকলেও কাছে আসছে না, এলাকার সকল শিশু ভয়ে আতঙ্ক রয়েছে। যারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের দৃষ্টান্দমূলক বিচার দাবি করছি।
জানা গেছে, ৫ বছরের শিশু ফাহিমা বাবা আমির হোসেন ও পরকীয়া প্রেমিকা লাইলি আক্তারকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে, এতে লাইলি আক্তার ও আমির হোসেন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং লাইলি আক্তার এই বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমির হোসেনকে চাপ দিতে থাকেন। পরে লাইলি আক্তারের প্ররোচনায় গত ৬ নভেম্বর শিশু ফাহিমার বাবা ঘাতক আমির হোসেন, মো. রবিউল আউয়াল, মো. রেজাউল ইসলাম ইমন, লাইলি আক্তার ও মো.সোহেল রানা পূব পরিকল্পিতভাবে শিশু ফাহিমাকে বেড়ানোর কথা বলে দেবিদ্বার পুরাতন বাজার এলাকার গোমতীর দক্ষিণ দিকে নির্জন স্থানে নিয়ে
গলায়, পায়ে ছুরি চালিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে প্লাস্টিকের দুটি বস্তাবন্দি করে দেবিদ্বার উপজেলা এলাহাবাদ গ্রামের কাচিসাইর এলাকার নজরুল মাস্টারের বাড়ির একটি সরকারি কালর্ভাটের নিচে ফেলে যান। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিশু ফাহিমার বাবাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো.আরিফুর রহমান বলেন, শিশু ফাহিমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ফাহিমার বাবাসহ পাঁচ আসামীকে বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। যারাই অপরাধে জড়িত হবে তাকে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।