অবজ্ঞা উড়িয়ে দেশ আজ উন্নয়নের আদর্শ
Published : Thursday, 16 December, 2021 at 12:00 AM
স্বাধীনতার
পর বাংলাদেশের টিকে থাকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল পশ্চিমারা। তাদের অনুমান
মিথ্যা প্রমাণ করে বাংলাদেশ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে বিশ্বের
উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। বাংলাদেশকে এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে
দেখে বিশ্ব। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল
দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের সনদ পেয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, গবেষণা
প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিবিদদের মুখে শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশের জয়গান বিজয়ের ৫০
বছর পর পেছন ফিরে তাকালে অনেক স্বস্তির কারণ দেখা যায়। যার করাল থাবা থেকে
স্বাধীন হয়েছিলাম আমরা, সেই পাকিস্তানকেও অনেক ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছে
বাংলাদেশ।
উন্নয়নের মডেল:
সর্বশেষ এক দশকে প্রায় সব সূচকেই অভূতপূর্ব
উন্নয়ন ঘটেছে বাংলাদেশের। রফতানি, রিজার্ভ, জিডিপি থেকে শুরু করে বাজেটের
আকার, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ, রাজস্ব, রেমিট্যান্স, দারিদ্র্য নিরসন,
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো তৈরি ও উন্নয়ন,
বিদ্যুৎ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে
এসেছে প্রত্যাশিত সফলতা।
উন্নয়নের এ দীর্ঘ পথ মসৃণ ছিল না। হোঁচট খেতে
হয়েছে অনেকবার। রাজনৈতিক উত্থান-পতনই ছিল বড় অন্তরায়। মোকাবিলা করতে হয়েছে
অনেক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস। তবু পদ্মাসেতুর মতো অনেক বড় বড় প্রকল্প বৈদেশিক
সহায়তা ছাড়াই বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে নোবেলজয়ী
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বেশ আগেই বলেছেন, যারা এক সময় বাংলাদেশকে
‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিল তারা আজ এ দেশকে ‘উন্নয়নের মডেল’ মনে করছে।
মেট্রোরেলমেট্রোরেল:
দারিদ্র্য
বিমোচন, নারীশিক্ষা, মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমানো, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ,
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অগ্রগতি নজর কেড়েছে বিশ্ব
সম্প্রদায়ের। করোনা মহামারির কারণে এ বছর বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেখানে
নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখেছে সেখানে বাংলাদেশ ধরে রেখেছে আগের ধারাবাহিকতা।
বাজেট ও রিজার্ভ:
৭৮৬
কোটি টাকার বাজেট নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশের বাজেট আজ ছয় লাখ ৩
হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। আগের ছোট অর্থনীতির দেশ আজ এশিয়ার ‘টাইগার ইকনোমি’।
চলতি অর্থবছরে মাথাপিছু জিডিপিতে প্রতিবেশী ভারতকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
অর্থনীতির এ উত্থানকে ‘ছাই থেকে জন্ম নেওয়া ফিনিক্স’ বলে আখ্যায়িত করেছেন
প্রখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, পিপিপির ভিত্তিতে
বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩০তম। প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপারসের প্রক্ষেপণ
অনুযায়ী, ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে ২৩তম স্থান দখল করবে।
এইচবিএসসির প্রক্ষেপণ বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম
বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে।
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল ৩৪ কোটি
মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে তা বেড়ে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪০ দশমিক৫৩ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড হয়েছিল। করোনা সংক্রমণের
কারণে বিদায়ী দুটি অর্থবছরে কিছুটা কমেছে।
স্বাধীনতার পর প্রায় এক দশক
বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের কোনও তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নেই।
১৯৮১-৮২ অর্থবছরের রিজার্ভের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সর্বপ্রথম পাওয়া
যায়। তখন রিজার্ভ ছিল ১২ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই রিজার্ভ গত ২৪ আগস্ট মাসে
বেড়ে ৪৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। অবশ্য সম্প্রতি এই রিজার্ভ কিছুটা
কমেছে। বর্তমানে রিজার্ভ (১৭ নভেম্বর) ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। রিজার্ভ
কমলেও এর পরিমাণ পাকিস্তানের চেয়ে আড়াইগুণ।
জীবনমানের উন্নয়ন:
১৯৭২
সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল সাড়ে ৪৬ বছর। ৫০ বছরে ধাপে ধাপে
মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২.৮ বছরে পৌঁছেছে। ৫০ বছরে গড় আয়ু বেড়েছে ২৪ বছর।
১৯৭১
সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বছরে গড়ে এক শতাংশের বেশি
হারে বেড়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই হার পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে।
গত বছর এ হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
স্বাধীনতার বছর দেশের ৮০ ভাগ মানুষ
দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত। সর্বশেষ হিসাবে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ
দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। করোনা সংক্রন না হলে দারিদ্র সীমায়
বসবাসকারী জনসংখ্যা আরো কমতো।
স্বাধীনতার পর পর দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন
ক্ষমতা ছিল ৫০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন হতো গড়ে ৩০০ মেগাওয়াট। এখন তা ২৫ হাজার
২৩২ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। দেশের ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষই পেয়েছে বিদ্যুৎ।
ইতোমধ্যে
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষপণ করে স্যাটেলাইট জগতেও নাম
লিখিয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতি নিচ্ছে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট পাঠানোর।
স্বাধীনতার
৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য উল্লেখ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববাসী যা ভাবতে
পারেনি, তাই করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো
বাংলাদেশকে। এখন নিন্দুকেরাও আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা
করে। আর্থ-সামাজিক সব সূচকেই বাংলাদেশ তার অপ্রতিরোধ্য সক্ষমতার স্বাক্ষর
রেখেছে।