বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
হিসাবে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে বছরে ৩৭ হাজার মানুষ মারা যায়, যাদের
বয়সের গড় মাত্র ৩৮ বছর। সংস্থাটির ২০১৮ সালের এক গবেষণায় ঢাকাকে বিশ্বের
তৃতীয় সর্বোচ্চ দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু ঢাকা নয়,
বাংলাদেশের সব বড় শহরের দূষণচিত্র প্রায় একই রকম। ভালো নয় গ্রামাঞ্চলের
অবস্থাও। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী প্রচলিত ইটভাটা। জানা
যায়, বাংলাদেশে প্রায় আট হাজার ইটভাটা রয়েছে, যার বেশির ভাগেরই অনুমোদন নেই
কিংবা পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এগুলো কোনো আইন মানে না। চিমনির ধরন বা
উচ্চতা—কোনোটাই নিয়মানুযায়ী নয়। ড্রাম চিমনির ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও বেশির
ভাগ ভাটায় ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হয়। এসব ভাটায় কয়লার বদলে নির্বিচারে
কাঠ পোড়ানো হয়। ফলে এগুলোর বায়ুদূষণের মাত্রাও হয় অনেক গুণ বেশি। গতকাল
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, যশোরের চৌগাছা উপজেলায় মোট ১৭টি
ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে ১৬টিরই পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। অভিযোগ
রয়েছে, ভাটা মালিকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করেই এসব ইটভাটা
চালিয়ে আসছেন।
আইন অনুযায়ী লোকালয়ে বা লোকালয়ের কাছাকাছি কিংবা সংরক্ষিত
বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা করা যায় না। বাস্তবে
বনাঞ্চলের গা ঘেঁষে বা লোকালয়ের মধ্যেই অনেক ইটভাটা পরিচালিত হতে দেখা যায়।
ইটভাটা থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পাশাপাশি অত্যন্ত ক্ষতিকর কার্বন
মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইডসের মতো গ্যাস নির্গত
হয়। পাশাপাশি অনেক পার্টিকুলেটেড ম্যাটার্সও বেরিয়ে বাতাসে মেশে। মানুষের
নিঃশ্বাসের সঙ্গে এগুলো ফুসফুসের গভীরে চলে যায়। কার্ডিওভাসকুলার
সিস্টেমেরও ক্ষতি করে। এতে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি হৃদরোগে
আক্রান্তের সংখ্যাও ব্যাপক হারে বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ক্যান্সারসহ আরো
অনেক রোগ। তাই উন্নত বিশ্বে পুরনো প্রযুক্তির ইটভাটা নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশেও হাইব্রিড হফমান প্রযুক্তি বা টানেল প্রযুক্তির মতো ইটভাটার
কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যেগুলোর দূষণ খুবই কম। জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিও কম হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে বছরে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়
বায়ুদূষণের কারণে, যার ৯০ শতাংশ মৃত্যুই ঘটে দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশে,
বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকায়।
আমরা উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু
জনস্বাস্থ্য রক্ষার দিকটি উপেক্ষা করে আমরা বেশি দূর এগোতে পারব কি? কম
বায়ুদূষণ করে এমন উন্নত প্রযুক্তির ইটভাটা নির্মাণকে উৎসাহিত করে অনেক আগেই
পুরনো ও অস্বাস্থ্যকর ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়া যেত। গ্যাসে ইট পোড়ানোর
ব্যবস্থা বাড়িয়েও বায়ুদূষণ অনেক কমানো যেত। সর্বোপরি প্রচলিত আইন
বাস্তবায়ন করা গেলে প্রচলিত ইটভাটাগুলোর দূষণও অনেক কমানো যেত। কিন্তু
স্থানীয় প্রশাসনের ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ সেই দূষণ কমাতে সহায়তা করছে না।
চৌগাছা উপজেলায় ১৭টির মধ্যে ১৬টি ইটভাটাই পরিবেশ ছাড়পত্র পায়নি, তার কারণ
সম্ভবত সেগুলো পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী নির্মিত বা পরিচালিত হয়নি। তাহলে
এই ইটভাটাগুলো বছরের পর বছর চলে আসছে কিভাবে? আমরা চাই, দ্রুত ইটভাটাগুলোর
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের জবাবদিহিও
নিশ্চিত করা হোক।