ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা
Published : Saturday, 8 January, 2022 at 12:00 AM
ইউপি নির্বাচনে সহিংসতাশঙ্কা ছিল আগে থেকেই। গণমাধ্যমে সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছিল। শঙ্কা সত্য প্রমাণ করে পঞ্চম ধাপে দেশের ৭০৮ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়েছে গত বুধবার। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় দুই নারীসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। বগুড়ার গাবতলীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হন। সহিংসতায় আহত হয়েছেন ৮৪ জন। কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও অস্ত্র বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৮ জন আটক হন। নৌকার ১০ সমর্থকসহ ১১ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শরীয়তপুরের নড়িয়ার ভোজেশ্বর, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর আহলা কড়লডেঙ্গা ও কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতে অন্তত চারজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারা হয়েছে, এমন খবরও এসেছে গণমাধ্যমে।
বাংলাদেশে আগে উৎসবের আমেজে নির্বাচন হতো। বলা হতো ভোট উৎসব। এখন সেটা ভোটযুদ্ধ হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনারদের একজন বলেছেন, ‘এখন ভোটযুদ্ধে যুদ্ধ আছে, ভোট নেই।’ কিছু সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও এনেছেন তিনি। তাঁর মতে, ‘জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করা এখনো সুদূরপরাহত।’
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শুরু থেকে পঞ্চম পর্ব পর্যন্ত প্রতিটি পর্বেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত তীব্র দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। এমন নয় যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অতীতে কখনো সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে সেটা এত তীব্র হয়ে দেখা যায়নি। এবারের সংখ্যাটি বোধ হয় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং সমর্থকদের মধ্যে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলেও নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। আর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাঁরা সবাই পরস্পরের পরিচিত। শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এই হানাহানির ঘটনা, প্রাণহানি কি মেনে নেওয়া যায়? সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলাদলি-দ্বন্দ্ব, সংঘাত-সংঘর্ষ, হানাহানি, রক্তারক্তি যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে এমন আশঙ্কাও তো অমূলক নয়।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতার জন্য কি শুধু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাই দায়ী? নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কি ব্যর্থতা নেই? সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি কি আন্তরিকতার প্রমাণ দিতে পেরেছে? অন্যদিকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোও কি যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে? এ পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছে তা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনের গৃহীত ব্যবস্থা মোটেও পর্যাপ্ত ছিল না। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বরাবরই দাবি করে আসছে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে তো বুঝতে হবে যে জনগণের আস্থা হারালে সেই কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা তো দূরে থাক, ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচনও করতে পারে না।
নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গ্রহণযোগ্যতা হারালে তার ফল তো ভালো হবে না। কাজেই যেকোনো মূল্যে আস্থা ফেরাতে হবে। আগামী দিনগুলোতে ভোটযুদ্ধ নয়, ভোট উৎসব হোক-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।