ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
নানা বাড়িতে মেলা দেখতে এসে হাসপাতালে কাতড়াচ্ছে দুই ভাই
Published : Saturday, 15 January, 2022 at 12:00 AM, Update: 15.01.2022 2:26:44 AM
নানা বাড়িতে মেলা দেখতে এসে হাসপাতালে কাতড়াচ্ছে দুই ভাইতানভীর দিপু:
আবির হোসেন নাসিম ও সাকিব হোসেন দুজন একে অপরের খালাতো ভাই। মেলায় যাওয়ার জন্য মায়ের সাথে এসেছিলেন নানার বাড়িতে। বৃহস্পতিবার নানার বাড়ির পাশে ঠান্ডা কালি মেলার প্রস্তুতি দেখতে গিয়েছে মামা আব্দুর রউফের সাথে। অন্যান্যদের সাথে জড়ো হয়েছিলেন গ্যাস সিলিন্ডারের বেলুন বিক্রেতার কাছে। রঙ্গিন বেলুনের মাঝে যখন হারিয়ে যাচ্ছিলো রঙ্গিন জগতে। তখনেই বিকট শব্দে বিষ্ফোরন হয় গ্যাস সিলিন্ডারের। বিষ্ফোরনে গুরুতর আহত হয় তারা তিনজন।  আবির ও সাকিবের মতো এমন আরো অনেক শিশু রঙ্গিন ঘোর কাটিয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের শর্য্যায় ।
বৃহস্পতিবার বিকালে নাঙ্গলকোটে বিরুলি গ্রামে বেলুন ফোলানোর সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে ১০ শিশুসহ ৩০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ২১ জনই কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। গতকাল শুক্রবার পাঁচজনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
আহত শিশু আবির হোসেনের মা মাজেদা বেগম বলেন, শিশুদের আনন্দ দিতে আমি ও আমার বোন শাহজাদী বেগম বৃহস্পতিবার সকালে ঠান্ডাকালি মেলায় যাওয়ার জন্য বাবার বাড়িতে যাই। শুক্রবার মেলা হওয়ার কথা। শিশুদের আনন্দ দেওয়ার পরিবর্তে আজ তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমার ছেলে, বোনের ছেলে ও ভাই তিন জনের অবস্থা এখন শংকটাপন্ন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।
আহত আরেক শিশু নাজমুন নাহার পাখির মামা আলমগীর হোসেন বলেন, খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে হাসপাতালে এস আমার ভাগনিকে সনাক্ত করতে পারছিলাম না। তার পুরো শরীর পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছিলো। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর আমার বোন বাসা বাড়ির কাজ করে সংসার চালাতো। আমরা তার চিকিৎসা সেবা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।
নাঙ্গলকোটে বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের ঘটনায় আশংকাজনক পাঁচ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জন শিশু রয়েছে। বিষ্ফোরণের ঘটনায় এপর্যন্ত ১৬ জন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ১০ জনই শিশু। যার মধ্যে পাঁচ জনকে ঢাকায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আহতদের স্বজনরা বলছে, পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক হওয়ায় বেসরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসা সম্ভব না এদের কারোরই। আহতদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গুরুতর আহতদের অধিকাংশের পরিবারেরই অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। তাদের কেউ দিন মজুর, কৃষক কিংবা রিকশা চালকের পরিবারের সদস্য। এছাড়া বেলুন বিক্রেতার পরিবারের ৬ সদস্যও এই দুর্ঘটনায় আহত।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক সাজেদা খাতুন জানান, শুক্রবার সকালে চিকিৎসকরা দেখার পর যাদের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। নাঙ্গলকোট উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা আশরাফুল হককে আহবায়ক করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক ভাবে ১৫ জন আহতকে ১০ হাজার টাকা করে প্রাথমিক অনুদান দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহযোগিতা করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) শাহাদাত হোসেন আরো জানান, তদন্ত কমিটি ৩ দিনের মধ্যে এই দুর্ঘটনার আদ্যোপান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। এছাড়া তদন্ত কমিটির সদস্যরা আহতদের সার্বিক খোঁজ খবর নেবেন।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামইয়া সাইফুল জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখান থেকে বিষ্ফোরিত সিলিন্ডারটির ভগ্নাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার কারণ এবং আরো অন্যান্যদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গতকাল বিকালে কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে বিরুলি গ্রামে বেলুন ফোলানোর সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে ১০ শিশুসহ ৩০ জন আহত হয়। এর মধ্যে ২১ জনই কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।