শেষবেলায় নূরুল হুদা কমিশন কেমন নির্বাচন উপহার দেবে নারায়ণগঞ্জে? সেখানকার মানুষ কি নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন? এ প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে কেবল নারায়ণগঞ্জবাসী নয়, সারা দেশের মানুষের মনে। নূরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি। আর আজ রোববার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ। কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন যেভাবে গত পাঁচ বছর নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সীমাহীন ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে, তাতে তাদের ওপর ভরসা কম।
তবে ২০১১ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের যে ধারাবাহিকতা আমরা দেখে এসেছি, তাতে সেখানে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়া অসম্ভব নয়। বিশেষ করে গত তিন সপ্তাহের নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রত্যেক প্রার্থী জনগণের কাছে নির্বিঘ্নে তাঁদের বক্তব্য দিয়েছেন, জনসংযোগ করেছেন, কোনো অঘটন ঘটেনি। যদিও এর কৃতিত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়। এ জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আরও নির্দিষ্ট করে বললে প্রার্থীরা ধন্যবাদ পেতে পারেন। তাঁরা নিজ নিজ কর্মসূচি ও পরিকল্পনা ভোটারদের কাছে তুলে ধরেছেন; প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সম্পর্কে কোনো বিদ্রূপাত্মক কথা বলেননি; যা বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে বিরল।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী, যিনি গত দুই মেয়াদে মেয়র ছিলেন এবং বিএনপির সাবেক নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের মধ্যে। বিএনপি নির্বাচন না করায় তৈমুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০১১ সালে সেলিনা হায়াৎ আইভী শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন, তখন দলীয় প্রতীকে ভোট হতো না। ২০১৬ সালে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াৎ হোসেনকে পরাজিত করে। এই দুই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি।
এবারও নারায়ণগঞ্জের মানুষ আশা করে, যে প্রার্থীই জিতুন না কেন, নির্বাচনটি যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়। নির্বাচনের প্রচারের শেষ মুহূর্তে শুক্রবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার সংবাদ সম্মেলন করেও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে কিছু শঙ্কার কথাও বলেছেন। সেলিনা হায়াৎ আইভী ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার আশঙ্কা করেছেন। অন্যদিকে তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁর কর্মীদের গ্রেপ্তার করছেন এবং তাঁদের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছেন।
একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য দুই প্রার্থীর বক্তব্যকে আমলে নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করি। নির্বাচন কমিশনকে নীরব দর্শক হয়ে থাকলে চলবে না। তৈমুর আলম খন্দকারের কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা থাকলে তফসিল ঘোষণার আগে কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেয়নি? তফসিল ঘোষণার পর কাউকে গ্রেপ্তার বা কারও বাড়িতে তল্লাশি চালানো নির্বাচনকে প্রভাবিত করার বহু পুরোনো কৌশল। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করি। অন্যদিকে সেলিনা হায়াৎ আইভী ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার আশঙ্কা করেছেন, তা-ও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল ভোটের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ শেষ মুহূর্তে যাতে ব্যাহত করতে না পারে, সে বিষয়ে কমিশনকে সুদৃঢ় থাকতে হবে। দেশবাসী নারায়ণগঞ্জে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই দেখতে চায়।