দাম নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে সরু চাল আমদানি করা হবে
Published : Sunday, 13 February, 2022 at 12:00 AM
বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ ভোক্তা সরু ও মাঝারি মানের চাল খায়। এই চালের দান উৎপাদন হয় বোরো মৌসুমে।
গত বোরো মৌসুমের ধান-চালের মজুত প্রায় শেষ। ফলে সরবরাহ কম থাকায় সরু চালের দাম দিন দিন বাড়ছে।
এজন্য সরকার বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর মনিটরিংসহ মিলগেটে অভিযান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের চাল রফতানি নিষেধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশে চাহিদার ভিত্তিতে প্রয়োজন হলে সরু চাল আমদানি করা হবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, বর্তমানে খুচরায় মিনিকেট প্রতিকেজি ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল ৬৭ থেকে ৭০ টাকা, আঠাশ ও ঊনত্রিশ ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং পাইজাম ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সরুচাল মিনিকেট মানভেদে ৬০ থেকে ৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৬১ থেকে ৬৫ টাকা, বাসমতি ৬৮ থেকে ৭২ টাকা, মোটা চাল বিরি-২৮ মানভেদে ৪৩ থেকে ৪৭ টাকা, গুটি ৪০ থেকে ৪২ টাকা, পাইজাম ৪২ থেকে ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও এসব প্রতি কেজি চাল ২ থেকে ৩ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া পাইকারি আড়তে ১০ থেকে ১৫ দিন বিক্রি করার মতো চাল তাদের মজুত রয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে চাল কিনে বেশি দামে বিক্রি করি। আড়ৎদারদের কাছে দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বলে মিলগেটে দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। যার প্রভাবে চালের দাম বাড়ছে।
এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে সরু চালের চাহিদা বেশি থাকলেও দাম কমানোর কোনো সিস্টেম আমাদের কাছে নাই। তবে আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের উৎপাদিত সরু চাল যদি কারো কাছে মজুত থাকে সেটা যাতে বাজারে আসে, সে জন্য মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের চাল রফতানিতে নিষেধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মিলগেটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের বিভিন্ন ধরনের আইনানুযায়ী যেসব অভিযান রয়েছে সেগুলো আরও কঠোর করা হয়েছে। যাতে উৎপাদিত সরু চাল বাজারে চলে আসে। যদি চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকে তাহলে কোনো কিছুই কাজে আসবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে। যদি আমরা দেখি কোনোভাবেই বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল থাকছে না, তখন প্রতি বছরের মতো এবারও ভারত থেকে চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা এখনও চাল আমদানিতে যাইনি। কারণ আমরা চেষ্টা করছি দেশে উৎপাদিত চাল কোথাও যদি মজুত থাকে। মাত্র দুই মাসের ব্যপার, এপ্রিলের মাঝামাঝি নতুন ধান বা চাল বাজারে চলে আসবে। সেজন্য আমরা মনিটরিং জোরালো করছি। বিদেশ থেকেও সরু চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। যখন দেখব যে কোনোভাবেই দেশে সরু চাল নেই, তখন আমদানি করা হবে।
খাদ্যসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা বা সম্মতি কোনোটিই দেননি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সামারি দিয়েছি, সেটা তিনি দেখবেন। তারপর হয়তো প্রয়োজন হলে দেবেন। দেশে যদি মজুত থাকে তাহলে আমদানি করে বৈদেশিক মুদ্রা নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। তাই বলা যায় দেশে সরু চালের চাহিদার ভিত্তিতে প্রয়োজন হলে আমদানি করা হবে। এবছর শুধু সরু চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। কারণ মোটা চাল আমাদের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
তিনি বলেন, আসলে মোটা চালের দাম বাড়ছে না। সরু চালের দাম একটু বাড়ছে। আমারা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন চাল কিনেছি। মোট ৭ লাখ ২০ হাজার টন চাল সংগ্রহ করব। চালের দাম বাড়লেতো আমাদের চাল দিতো না। কেউ সরু চাল খেলেতো আমি নিষেধ করতে পারব না। সরু চালের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এজন্য এ চালের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআই সভাপতি আহসান এইচ মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ এখন আর মোটা চাল খেতে চায় না। ফলে সরু চালের চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে দামও বেড়েছে। এজন্য সরকারকে এ বছর দেড় থেকে ২ মিলিয়ন টন চাল আমদানি করতে হবে। সরকারকে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তাহলে দাম কম বাড়বে। পাশাপাশি সরকারকে নজর রাখতে হবে মিল মালিকরা যেন প্রয়োজেনের অতিরিক্ত মজুত না করতে পারে। মিলাররা বাজারকে স্থিতিশীল রাখে। যখন বাজারে ঘাটতি থাকে তখন সরকারের উচিৎ সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করা। ফলে সরকারকে আমদানি করে বাজারের ঘাটতি মিটাতে হবে।
বাবুবাজার পাইকারি আড়তের রশিদ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আব্দুল রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, চাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) বন্ধ হলে চালের দাম বেড়ে যায়। আবার এলসি চালু হলে স্বাভাবিক হয়। তাই সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে চালের এলসি চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে মিলগেটে নজরদারি বাড়াতে হবে।
বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মোটা চালের দাম এক দুই টাকা কমলেও সরু চালের দাম বাড়ছে। সরু চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উচিত আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) ওপেন করে দেওয়া। কারণ আমদানির খবরে চালের দাম কমে এবং আমদানি বন্ধ হলে আবার বেড়ে যায়। সরকার যদি আমদানি ওপেন না করে তাহলে সরু চালে আরও বাড়বে।
উল্লেখ্য, গড়ে সরকারের গুদামে সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন বা দেশের মোট চাহিদার ১৫ দিনের চাল মজুদ থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। বর্তমানে সরকারি গুদামে ২০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১৭ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। তবে ধানের পরিমাণ কম, মাত্র ৩৮ হাজার মেট্রিক টন। আর ২ লাখ ৭৬ হাজার টন গম।