Published : Saturday, 12 February, 2022 at 12:00 AM, Update: 12.02.2022 12:39:46 AM
তানভীর দিপু ||
মাত্র
এক শতক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ছোট ভাইকে
কুপিয়ে হত্যা করেছে বড় ভাই। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় উপজেলার
শ্রীপুর ইউনিয়নের পাইকোটা গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়
ঘাতক। নিহত ব্যক্তির নাম হাফেজ আহমেদ (৬০)। তিনি পাইকোটা গ্রামের মৃত আবদুল
মজিদের ছেলে। অভিযুক্ত বড় ভাই আবদুল মালেক (৬৫) নিহত হাফেজ আহমেদের আপন বড়
ভাই। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য। শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযান
চালিয়ে লালমাই থানার কলমিয়া বাজার থেকে আবদুল মালেককে গ্রপ্তার করা হয়েছে
বলে নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন
চাকমা। তিনি জানান, মাত্র এক শতক জায়গা নিয়ে দীর্ঘ দিনের দ্বন্ধ।
গ্রেপ্তারের পর আবদুল মালেক প্রাথমিক ভাবে খুনের দায় স্বীকার করেছেন।
স্থানীয়
সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের মৃত আবদুল মজিদের ছেলে হাফেজ আহমেদ(৬০) ও
সাবেক সেনা সদস্য আবদুল মালেকের(৬৫) দীর্ঘ বছর ধরে জায়গা সম্পত্তির বিরোধ
চলে আসছিল। বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে একাধিকবার শালিশি সভা হয়।
সভায় হাফেজ আহমেদ এক শতক ভুমি বেশি পায়। এ বিষয়টি বড় ভাই আবদুল মালেক মেনে
নিতে পারেনি। এনিয়ে প্রায় সময় দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো। শুক্রবার
সকাল সাড়ে ৯টায় আবদুল মালেক বাড়ির পাশের মমতাজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে
দিয়ে হাফেজ আহমেদকে জাকিরের চা দোকানে ঢেকে নিয়ে যায়। সেখানে দুই ভাইয়ের
মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে দোকানের মধ্যে থাকা একটি ছুরি নিয়ে প্রকাশ্যে
দিবালোকে হাফেজ আহমেদকে কুপিয়ে বড় ভাই আবদুল মালেক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে
যায়। স্থানীয়রা হাফেজ আহমেদকে উদ্ধার শেষে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার
পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহত হাফেজ আহমেদের ছেলে মোস্তফা কামাল বলেন, তার
দাদা আবদুল মজিদের দুই সংসার। হাফেজ আহমেদ পরের সংসারের ছেলে। তার জেটা
আবদুল মালেকের সাথে দীর্ঘদিন ধরে ভুমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। শুক্রবার
সকালে তার বাবাকে জেটা আবদুল মালেক লোক মারফতে ঢেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে
পালিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার বলেন, হাফেজ
আহমেদ ও আবদুল মালেকের সম্পত্তির নিয়ে ২০ বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে
ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে একাধিক শালিশি সভা হয়। সভার কোন রায়ই আবদুল
মালেক মানেন না। শুক্রবার স্থানীয় মমতাজ মিয়াকে দিয়ে আবদুল মালেক তার সৎ
ভাই হাফেজ আহমেদকে বাড়ির পাশে অবস্থিত জাকিরের চা দোকানে ঢেকে নিয়ে যায়।
সেখানে দুই ভাইয়ের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আবদুল মালেক হাফেজ আহমেদকে
প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
আবদুল মালেকের স্ত্রী
জোবেদা বেগম বলেন, আমি শোর-চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি সেখানে লোকজন জড়ো হয়ে
আছে। মাটিতে অনেক রক্তের দাগ লেগে আছে। পরবর্তীতে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে
পারি-আমার স্বামী আবদুল মালেক দেবর হাফেজ আহমেদকে কুপিয়ে হত্যা করে
ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
(ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত আবদুল মালেক ঘটনার পর
পালিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যায় তাকে লালমাই থানার কলমিয়া বাজার থেকে গ্রেপ্তার
করে পুলিশ। তিনি আরো জানান, মাত্র এক শতক জায়গা নিয়ে দীর্ঘ দিনের এই
পারাবারিক দ্বন্ধে এই হত্যাকান্ড। আবদুল মালেক প্রাথমিক ভাবে দায় স্বীকার
করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।