অনলাইনে জন্মনিবন্ধন ভোগান্তির শেষ কোথায়
Published : Monday, 14 March, 2022 at 12:00 AM
মাহমুদুল হক আনসারী ||
জন্মনিবন্ধনপ্রাপ্তি শিশুর অধিকার। রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিশুকে জন্মনিবন্ধন দিতে বাধ্য। রাষ্ট্রের দায়িত্ব জন্ম-মৃত্যু সনদ নাগরিককে প্রদান করা। অনলাইন জন্মনিবন্ধনের আগে হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন ইউপি পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনে নাগরিকদের দেওয়া হতো। একই জন্মনিবন্ধন এখন ডিজিটালাইজ করে অনলাইনে প্রদান করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অনলাইন জন্মনিবন্ধন ছাড়া একজন শিশু চিকিৎসা থেকে স্কুলে ভর্তি পর্যন্ত নানা কর্মকাণ্ডে জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হচ্ছে। শিশুদের স্কুলে ভর্তির জন্য বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন সনদ স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হচ্ছে। ফলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন- এটা জরুরিভিত্তিক শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক বাংলাদেশের জন্ম সনদ। সরকারি সার্কুলার অনুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন- সব সেক্টরে স্থানীয় নাগরিকের জন্য জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ অনলাইনে পাওয়া ও গ্রহণ করার একটা নিয়মনীতি দেওয়া হয়েছে। সব নিয়ম অনুসরণ করে একজন গ্রাহক অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের আবেদন করার পর তিন দিন থেকে শুরু করে তিন মাস পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি করেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন হাতে পাচ্ছেন না। নানা জটিলতা, ভোগান্তি, অবৈধ অর্থের রমরমা বাণিজ্যের কথা পত্রিকার মাধ্যমে সারাদেশের চিত্র জানা যায়।
অনলাইন জন্মনিবন্ধনের জন্য সারাদেশে কোনো না কোনো এলাকায় হরহামেশা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নাগরিকের নানা ধরনের হৈ-হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সহজ একটি বিষয় নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিকের মধ্যে, অধিকার নিয়ে এত বিশৃঙ্খলার কারণ ও হেতু কীÑ বুঝে আসছে না। একটি জিনিস বুঝতে পারছি যে, সেটি হচ্ছে- বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগণের আশ্রয়। তারা এ দেশে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসার পর থেকে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের নাগরিকদের ওপর এক প্রকার প্রশাসনিক বাকবিতণ্ডা বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে। এর প্রভাব সারাদেশে এখন বিস্তৃতি লাভ করেছে। মনে হয় যেন রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম বিভাগের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য অভিশাপ হয়ে এসেছে। প্রশাসনের নানা সেক্টর যেমন- পাসপোর্ট অফিস, থানা-পুলিশ, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা সেক্টরে চট্টগ্রামের নাগরিকরা তাদের কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মোটেও চট্টগ্রামবাসী এসবের জন্য প্রস্তুত নয়। চট্টগ্রাম বিভাগ, এ অঞ্চলের মানুষ অতীব আদর-যত্নের মাধ্যমে অতিথি হিসেবে রোহিঙ্গাদের বরণ করে নিয়েছে। জমি, ভিটাবাড়ি- সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ সরকারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, চট্টগ্রামের মানুষকে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এসব চিন্তা করা দরকার- কোনোভাবেই যাতে এ দেশের কোনো নাগরিক তাদের কারণে ভোগান্তির মধ্যে না পড়ে।
নির্বাচন কার্যালয়ে চট্টগ্রামের মানুষ নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সেখানেও এ অঞ্চলের ভোটাররা তাদের অধিকারমতো নির্দ্বিধায় সব ধরনের তথ্য দেওয়ার পরও নানাভাবে জটিলতার মধ্যে পড়ে। এ অঞ্চলের জন্য এসব দপ্তর নানা ধরনের তথ্য যাচাই-বাছাই করছে। তা বাংলাদেশের অন্যসব এলাকায় করা হয় না। এসব বিষয় চট্টগ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রশাসনের দপ্তরে ভোগান্তির সঙ্গে মোকাবিলা করছে। এসবের একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সমাধান দরকার। জনভোগান্তি নানাভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে অনলাইন জন্মনিবন্ধন, ভোটার হওয়া, পাসপোর্টপ্রাপ্তিÑ তিন জায়গায় চট্টগ্রামের মানুষ বেশি ভোগান্তির শিকার। এ ধরনের ভোগান্তি থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হবে। যারা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে বসে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কঠোরভাবে নির্দেশের মাধ্যমে জনগণের অধিকারপ্রাপ্তি সহজতর করতে হবে। যেসব ঘটনা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয়ে সংঘটিত হচ্ছে, সেসব ঘটনার সঙ্গে প্রশাসনের যারাই জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। কোনো জনপ্রতিনিধি স্থানীয় এলাকার জনগণের ওপর অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি করলে তাকেও বিচারের আওতায় আনা হোক। আইনকে সবার জন্য সমানভাবে ব্যবহার করা হোক। অনলাইন জন্মনিবন্ধনপ্রাপ্তিকে সহজ ও সহজলভ্যভাবে পাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
মাহমুুদুল হক আনসারী : সংগঠক ও গবেষক, ঢাকা