তানভীর দিপু:
পেন্সিল
স্কেচ, জলরং, মোম রং। রিকশা পেইন্টিং থেকে শুরু করে ছবিতে বিপ্লব ও জীবনের
গল্প। ভাস্কর্য আর ক্যালিওগ্রাফিতে ফুটে উঠেছে সচেতন মেধা ও মনন। একই
ছাদের নিচে দেয়ালে সারি সারি শিল্পকর্ম মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের। জেলা
শিল্পকলা একাডেমীতে কুমিল্লার বরেণ্য ৬৪ জন চারুশিল্পীর ১৭২ চিত্রকর্ম দিয়ে
সাজানো হয়েছে এবারের কুমিল্লা চারুকলা প্রদর্শনী-২০২২। এই শহরেরই
ভাস্কররাও অংশ নিয়েছেন এই প্রদর্শনীতে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত
১৮ই মার্চ উদ্বোধন করা হয় প্রদর্শনীটির।চলবে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত। বিকাল ৩
টা থেকে রাত ৮টা অবধি ৭ দিনব্যাপি এই অনুষ্ঠানে ছবি প্রদর্শনী ছাড়াও
চারুশিল্পীদের জন্য রয়েছে কর্মশালা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আগমন।
পথিকৃৎ
চারুশিল্পী পরিষদ কুমিল্লার সভাপতি চন্দন দেব রায় বলেন, কুমিল্লা জেলা
শিল্পকলা একাডেমি ও পথিকৃৎ চারুশিল্পী পরিষদের সমন্বয়ে এই প্রদর্শণী। গতবার
এই আয়োজনে ৪২ জন অংশগ্রহনকারী ছিলো, এবার ৬৪ জন শিল্পী অংশ নিয়েছে। আমরা
গর্ববোধ করছি এই আয়োজন নিয়ে। সারা বাংলাদেশ থেকে শিল্পীরা আমাদের অভিনন্দন
জানাচ্ছেন। চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ছাড়াও এই আয়োজনে থাকছে ভাস্কর্য প্রদর্শনী,
কর্মশালা ও শিল্প আড্ডা।
দেশ বরেণ্য শিল্পী উত্তম গুহ কুমিল্লার
কাগজকে বলেন, আমি প্রতি বছরই এই প্রদর্শণীতে অংশ নিচ্ছি। এটা খুবই আনন্দের
যে কুমিল্লায় এমন ধরনের আয়োজন হচ্ছে। কুমিল্লাবাসীর জন্য এটা অনেক বড়
প্রাপ্তি। এইবার নিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত এই আয়োজন, গত বছরের আগে কখনো
এমন আয়োজন হয়নি। আমি এই আয়োজনের উত্তোরোত্তর সফলতা কামনা করি।
কুমিল্লার
বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও কবি সৈয়দ আহমাদ তারেক বলেন, প্রদর্শনীতে
অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে তারুণ্য প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। পুরোনো ছবিও এসেছে।
তবে নতুন ছবি কম। প্রথম প্রদর্শণীর চেয়ে দ্বিতীয় প্রদর্শণীতে উঠতি
শিল্পীদের যে পরিমান অংশ নেবার কথা ছিলো- তা হয়নি। ছবি সাজানোর চেয়ে
বাহ্যিক সাজসজ্জা প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। শুধু মাত্র রিকশা পেইন্টিং নিয়ে ই
আলাদা করে একটি প্রদর্শনী করা হলে ভালো হত।
কুমিল্লা জেলা কালচারাল
অফিসার সৈয়দ মুহম্মদ আয়াজ মাবুদ বলেন, পথিকৃৎ কুমিল্লাকে তুলে ধরা হচ্ছে এই
প্রদর্শনীতে। কুমিল্লাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিভাগুলো একত্রিত ভাবে
প্রদর্শিত করার জন্য এই আয়োজন। শুধু কুমিল্লায় নয় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক
ভাবে খ্যাতি সম্পন্ন এই জেলার কৃতি সন্তানরা তাদের শিল্পকর্ম দিয়ে
প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে যাচ্ছেন-এটা আমাদের বড় পাওয়া। সবচেয়ে বড় বিষয় তরুণ
প্রজন্মের শিল্পীদের সাথে প্রবীণ শিল্পীদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি সুবর্ণ
সুযোগ তৈরী হয়েছে।
বিশিষ্ট চিকিৎসক ও ভাস্কর ইকবাল আনোয়ার বলেন, এমন
আয়োজন কুমিল্লাকে সমৃদ্ধ করে। নানান বয়সী চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে
প্রতিবছরই প্রদর্শনীটি মুখরিত হয়ে থাকে। প্রদর্শনী চলাকালীন সময়ে
দর্শনার্থীরা মুগ্ধতা নিয়ে ফিরে যেতে পারেন।
প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন
দেশ বরেণ্য চিত্রশিল্পী কে এম কাইয়ুম, নাসিমা মাসুদ রুবি, উত্তম গুহ্,
সুলতান শাহরিয়ারসহ অন্যান্যরা। এছাড়া কুমিল্লার কৃতি চিত্রশিল্পী নাজমা
আক্তার, চন্দন দেব রয়, শক্তি কাম সিনহা, ফারিয়া জেবা, রেজওয়ানুর রহমান,
দিলরুবা লতিফ, ইহাম হক খুকু, ইকবাল আনোয়ার, মজিবুর রহমান রিপন,দেবদাস
শিকদার, গোলাম মোস্তফা,মো. জহিরুল ইসলাম,কাবেরী শিল, মিজানুর রহমান আকন,
মো. সাঈদুজ্জামান, মাসুদ পারভেজ, জুনায়েদ মোস্তফা, শাকের আহমেদ, জিলানী
আলম, করিদুল ইসলাম, সামিউল আলম, নহু খন্দকার, নয়ন কুমার অধিকারী,মোশাররফ
হোসেন, উম্মে হাবিবা পিংকি, আবদুল্লাহ আল নোমান,তানজিরুল ইসলাম সাগর,
নারগিস খান,মো. আব্দুল আওয়াল খন্দকার, আখিনুর রহমান ঝরনা, আলিদা সুলতানা,
সিমরুন আক্তার, জান্নাতুল মাওয়া শিলা, ফাতেমা হিলালি রিমা, রহমত উল্লাহ
কবির ডানা,হাবিব পাপ্পু, অজিত কুমার দত্ত,সামিয়া সানজিদা, নুসরাত জাহান
মিম,সামিয়া কাউসার নীলিমা, সায়মা ইসলাম, শামীমা হিমা, লুৎফুন নাহার সুপ্তি,
সজীব খন্দকার, জানভী টিনা, রিজওয়ানা রহমান ঝুমু,নদী রাণী সিংহা, নয়ন
দেবনাথ,নওশীন তাবাসসুম নাবিলা, নুসরাত জাহান, সোনিয়া বিনতে হাসান, দেলোয়ার
হোসেন জীবন, তামান্না নুসরাত, অনিক বণিক, বশির উল্লাহ মজু: আলো, ফাহিমা
জাহান নিরা, মীরা সুলতানা স্মৃতি, জ্যোতিময়ী চন্দা, মাহফুজা সুলতানা
প্রমুখ।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, প্রদর্শনীতে সবচেয়ে প্রবীণ শিল্পী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক শিল্পী খাজা কাইয়ুম
এবং কনিষ্ঠ শিল্পী লুৎফুন নাহার সুপ্তি।