নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় শিশুসহ আরও দুই লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে নদীর নবীগঞ্জ এলাকার খেয়াঘাট থেকে ১৫ মাসের শিশু ও মদনগঞ্জ শাহ সিমেন্ট কারখানাসংলগ্ন নদী থেকে এক যুবকের ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া দুই লাশ হলো— সাফায়াত (১৫ মাস) ও জাবের (২৯)।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, সকাল ৮টার দিকে নদীর নবীগঞ্জ এলাকার খেয়াঘাট থেকে ১৫ মাসের শিশু ও মদনগঞ্জ শাহ সিমেন্ট কারখানাসংলগ্ন নদী থেকে ওই যুবকের ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো।
তিনি জানান, নদীতে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের উদ্ধারে নদীর তলদেশে ও নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।
এদিকে এখনও কয়েকজন তাদের নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে নদীর পারে অপেক্ষা করছেন। নদীর দুপারেই নিখোঁজের স্বজনদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। জীবিত পাওয়ার আর আশা নেই। এখন শুধু লাশ চান স্বজনরা। লাশের আশায় শীতলক্ষ্যার পাড়ে ছোটাছুটি করছেন তারা। শীতলক্ষ্যার পাড়ে এখনও চলছে মাতম।
এর আগে সোমবার ভোর ৫টায় শীতলক্ষ্যা নদীর চরসৈয়দপুর আল আমিননগর এলাকায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করা হলেও ভেতরে কোনো লাশ পাননি স্বজনরা।
এর আগে মৃত আটজন হলেন— সোনারগাঁও হরিয়ান প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা উম্মে খাইরুন ফাতিমা (৪০), মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার উত্তর ইসলামপুর এলাকার জয়নাল ভূঁইয়া (৫০), রমজানবেগ এলাকার আরিফা (৩৫), তার শিশু সন্তান সাফায়েত হোসেন (দেড় বছর), গজারিয়া উপজেলার ইসমানিরচর এলাকার জয়রাজ বংশীর ছেলে স্মৃতি রানী বর্মণ, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের আজিজের মেয়ে সালমা (৩৩), একই এলাকার ইউনুস খলিফার মেয়ে ফাতেমা (৭) ও একজন অজ্ঞাত।
নিখোঁজ ঢাকা ডেমরার আব্দুল্লাহ আল জাবেরের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমি আমার ছেলের লাশটি ফেরত চাই। জীবিত তো আর পাব না। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই, যেন উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা না হয়।
নিখোঁজ ফাতেমার চাচা আক্তার হোসেন বলেন, লঞ্চটি উদ্ধার করা হলো কিন্তু আমার ভাতিজিকে পেলাম না।
নিখোঁজ হাতেমের ছেলে সাগর বলেন, আমি আমার বাবার লাশ ফেরত চাই।
এর আগে রোববার দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে এমএল আশরাফউদ্দিন নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ প্রায় ৫০ যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
দুপুর সোয়া ২টার দিকে বন্দরের আল আমিননগরের বাংলা সিমেন্টঘাট এলাকায় এলে এমভি রূপসী ৯ নামে সিটি গ্রুপের একটি মালবাহী জাহাজ দ্রুতগতিতে অতিক্রম করার সময় যাত্রীবাহী লঞ্চটিকে পেছনের দিক থেকে ধাক্কা দেয়। এতে লঞ্চটি ডুবে যায়। এ সময় ১০-১৫ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠলেও অনেকেই নিখোঁজ হন।