মাত্র
১৩ রানের লক্ষ্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাঠে নামার আগেই আসলে হার লেখা হয়ে যায়
বাংলাদেশের। যেহেতু প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ, নিয়ম মেনে ব্যাটিংয়ে নামে
ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মামুলি এই লক্ষ্য ১৭ বলেই টপকে যায় ক্যারিবিয়ানরা। সেন্ট
লুসিয়া টেস্টে বাংলাদেশকে উড়িয়ে নিশ্চিত করে ১০ উইকেটের জয়। একই সঙ্গে দুই
ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সাকিব আল হাসানদের হোয়াইটওয়াশ করার উপলক্ষটাও রাঙিয়ে
নেয় ক্যারিবিয়ানরা।
সেন্ট লুসিয়া টেস্টের চতুর্থ দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে
বাংলাদেশ ১৮৬ রানে গুটিয়ে গেলে লিড পায় মাত্র ১২ রানের। সেই রান জন
ক্যাম্পবেল (৯*) ও ক্রেগ ব্র্যাথওয়েট (৪*) ২.৫ ওভারে অনায়াসে টপকে যান।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছিল ২৩৪ রানে। এরপর প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট
ইন্ডিজ করে ৪০৮ রান।
ম্যাচ দুটি ছিল আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ।
যেখানে বাংলাদেশের প্রাপ্তির খাতা শূন্য। তবে দুই টেস্ট জিতে নেওয়ায় ২৪
পয়েন্ট যোগ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নামের পাশে। তাতে ৯ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট
নিয়ে ইংল্যান্ডকে টপকে ছয় নম্বরে উঠে এসেছে ক্যারিবিয়ানরা। ১০ ম্যাচে ১৬
পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ৮ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে
অস্ট্রেলিয়া।
সেন্ট লুসিয়া টেস্টের চতুর্থ দিনে দুই সেশনে একটি বলও
হয়নি। তৃতীয় সেশন থেকে শুরু হয়েছে খেলা। বাংলাদেশ এজন্য বৃষ্টিকে ‘ধন্যবাদ’
দিতেই পারে। কারণ ভেজা আউটফিল্ডের কারণেই অতক্ষণ টিকিয়ে রাখতে পেরেছে
সেন্ট লুসিয়া টেস্ট! স্থানীয় সময় ৩টায় খেলা শুরুর পর বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি
বাংলাদেশের ইনিংস। ক্যারিবিয়ানদের দিতে পারে মাত্র ১৩ রানের লক্ষ্য।
বৃষ্টির
কারণে তৃতীয় দিনের খেলা আগেভাগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। চতুর্থ দিনের খেলা তাই
নির্ধারিত সময়ের আগে শুরু করার সূচি ছিল। কিন্তু ভেজা আউটফিল্ড ও খারাপ
আবহাওয়ার কারণে খেলা শুরু করা যায়নি। শুধু তা-ই নয়, পরিস্থিতির উন্নতি না
হওয়ায় লাঞ্চের আগেও শুরু হয়নিখেলা। অর্থাৎ, কোনও বল ছাড়াই লাঞ্চে যায় দুই
দল।
তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩৬ ওভারে ৬
উইকেটে ১৩২ রান। স্বাগতিকদের চেয়ে পিছিয়ে ছিল ৪২ রানে। ওই জায়গা থেকে নুরুল
হাসান সোহান (১৬*) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (০*) ছিলেন চতুর্থ দিন শুরুর
অপেক্ষায়। যদিও ভেজা আউটফিল্ডের কারণে লাঞ্চের আগে তাদের মাঠেই নামা হয়নি।
সূর্যের আলো না পাওয়ায় আউটফিল্ড শুকানো যায়নি। যে কারণে দিনের কয়েক ঘণ্টা
পেরিয়ে গেলেও খেলা শুরু হয়নি।
অবশেষে স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায়
(বাংলাদেশ সময় রাত ১টা) মাঠে গড়ায় চতুর্থ দিনের খেলা। তবে ক্যারিবিয়ান পেস
ঝড়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি সফরকারীরা। ৯ ওভারের মধ্যেই হারায় শেষ ৪ উইকেট।
এসময় যোগ করতে পেরেছে ৫৪ রান। এতে করে অন্তত ইনিংস ব্যবধানে হার এড়ানো
গেছে। যেটির পুরো কৃতিত্বই পাবেন সোহান। এই উইকেটকিপারের অপরাজিত ৬০ রানে
লিড নিতে পারে বাংলাদেশ।
১৬ রান নিয়ে দিন শুরু করে টেস্ট ক্যারিয়ারের
দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন সোহান। অন্যপ্রান্তে সতীর্থরা টিকতে না পারায়
ব্যক্তিগত সংগ্রহ বাড়াতে পারেননি তিনি। শেষ দিকে হাত খুলে খেলেছেন। ৫০ বলের
ইনিংসে মেরেছেন ৬ বাউন্ডারির সঙ্গে ২ ছক্কা।
কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর
খেলা শুরু হতেই বিদায় নেন মিরাজ। মাত্র ৪ রান করে আলজারি জোসেফের শিকার
তিনি। এরপর মাঠে নামা এবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদের কেউই
রানের খাতা খুলতে পারেননি।
চতুর্থ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে সফল
বোলার জেডেন সেলস। এই পেসার ৮ ওভারে ২১ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। কেমার রোচ ১৩
ওভারে ৫৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তাদের সমান ৩ উইকেট নিতে জোসেফের খরচ
৫৭ রান।
দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে এই ম্যাচের মোড় পাল্টে দিয়েছিলেন কাইল
মায়ার্স। ১৪৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা এই ব্যাটারের হাতেই উঠেছে
ম্যাচসেরার পুরস্কার। শুধু তা-ই নয়, সিরিজসেরাও তিনি।