দেশে
নতুন করে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গত ১৯ মার্চ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত
প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক শর নিচে। এরপর হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করে
সংক্রমণ। রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত
হয়েছে এক হাজার ৬৮০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে দুজনের।
পরীক্ষা বিবেচনায়
আক্রান্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৫.৬৬ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাঝখানে
সংক্রমণ কমে যাওয়ায় মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, এমনকি মাস্ক পর্যন্ত
পরছে না। এটিই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে,
সংক্রমণের বিস্তার রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে আবার তা ভয়াবহ
পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
করোনা মহামারি বিশ্বব্যাপী এখনো প্রবল রূপেই
বিদ্যমান। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। দেশটিতে
দৈনিক সংক্রমণ ফের ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। বাড়ছে আমাদের লাগোয়া রাজ্য
পশ্চিমবঙ্গেও। রবিবার সেখানে দৈনিক সংক্রমণ ছিল পাঁচ শর কাছাকাছি। ফলে
বাংলাদেশেও সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তার ওপর দেশের
উত্তরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। শত শত আশ্রয়শিবিরে বহু মানুষকে গাদাগাদি
করে থাকতে হয়েছে। এটিও সংক্রমণ বাড়ার কারণ হতে পারে। আসছে ঈদুল আজহা।
মার্কেটগুলো জমজমাট। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো চিহ্নই নেই। কয়েক দিনের
মধ্যেই শুরু হবে ঢাকা ছাড়ার প্রতিযোগিতা। বাসে ও লঞ্চে গাদাগাদি করে লাখ
লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। ঈদের পর একইভাবে তারা আবার ঢাকায় ফিরে আসবে। এটিও
করোনা সংক্রমণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত
বছরের জুনের তুলনায় এ বছরের জুনে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু অনেকটাই কম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে টিকা একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
জানা যায়, এ পর্যন্ত ১৩ কোটি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ এবং ১২ কোটি মানুষকে
দুই ডোজ করে টিকা দেওয়া হয়েছে। আর বুস্টার ডোজ পেয়েছে তিন কোটি মানুষ।
সম্ভবত এ কারণেই সংক্রমণ ও মৃত্যু তুলনামূলক কম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,
বুস্টার ডোজ প্রদানের গতি আরো বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে
চলার ক্ষেত্রে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অফিস-আদালত, জনসমাগমের স্থান ও
মার্কেটগুলোতে মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
কয়েক দিনের মধ্যে বসতে শুরু করবে কোরবানির পশুর হাট। হাটগুলোতে মানুষ
এমনভাবে গাদাগাদি করে চলাফেরা করে যে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধিও মানা হয় না।
হাটগুলোতে আগে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
গণপরিবহনেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে উঠেছে। সামাজিক
অনুষ্ঠানাদির পরিধি যেমন কমাতে হবে, তেমনি দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
আমাদের
মনে রাখতে হবে, এখন একমাত্র সচেতনতাই পারে এই মহামারি থেকে নিজেদের ও
পরিজনদের রক্ষা করতে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। মাস্ক
পরতে হবে। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাটাও
জরুরি। পাশাপাশি টিকা ও বুস্টার ডোজ প্রদানের গতি বাড়াতে হবে।