ঈদের
সময় ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়ে। নিকটজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে
নিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে মানুষ। স্বাভাবিক কারণেই এ সময় আন্ত জেলা বাস
কম্পানিগুলো তাদের ট্রিপের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। ঘরমুখো মানুষের ভিড় সামাল
দিতে চালু হয় বিশেষ সার্ভিস।
এ সময় বিআরটিসিও বিশেষ সার্ভিস চালু করে।
কিন্তু ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। ঈদের সময়
দেখা যায়, আঞ্চলিক রুটের অনেক বাস চলে আসে মহাসড়কে। এসব বাস মহাসড়কে
যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে এসব বাসের চালক মহাসড়কে যানবাহন
চালানোর ব্যাপারে অভিজ্ঞ নয়, তার ওপর রয়েছে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী
ওঠানো-নামানো। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রী
তোলা হচ্ছে বা নামানো হচ্ছে। এতে পেছনে যানবাহনের লম্বা লাইন পড়ে যায়,
সৃষ্টি হয় যানজট। এবার সড়ক-মহাসড়কের পাশে কোরবানির পশুর হাট না বসানোর জন্য
বলা হলেও সর্বত্র তা মানা হয় না। দেশের বিভিন্ন স্থানেই রাস্তার পাশে বসে
কোরবানির পশুর হাট। ফলে এই হাটগুলোও যানজটের কারণ হয়। এসব হাটে কোরবানির
পশুবাহী ট্রাক ঢোকা ও বের হওয়ার পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ঈদ যাত্রায় চরম
ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঘরমুখো মানুষকে।
কিন্তু এবারের চিত্র একটু আলাদা
হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘাটে আগে যে ভিড় দেখা যেত, তা এখন দেখা যাবে না।
অন্যদিকে দক্ষিণের অনেক যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে বলে পাটুরিয়া
ফেরিঘাটেও আগের মতো যানবাহনের চাপ থাকবে না। গত ঈদুল ফিতরেও মহাসড়কে
ভোগান্তির আশঙ্কা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত স্বস্তি নিয়েই গন্তব্যে পৌঁছেছে
মানুষ। এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল মহাসড়কে অতিরিক্ত মোটরসাইকেলের ব্যবহার ও
বাস কম থাকা। ফলে রাস্তা তুলনামূলক ফাঁকা ছিল।
পদ্মা সেতু চালু হওয়া,
সফিপুর ফ্লাইওভার ও মির্জাপুরের গোড়াই ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ায় এবারের ঈদ
যাত্রায় এসব মহাসড়কে স্বস্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে ভোগান্তির শঙ্কা
আছে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের
ধারণা, ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করার আশঙ্কা কম। তবে ঈদ যাত্রা বাধাগ্রস্ত
হতে পারে বন্যাকবলিত এলাকায়। অনেক উপজেলায় এখনো সড়ক যোগাযোগ চালু হয়নি।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যায় তাদের ২০০
কিলোমিটার সড়ক এবং ১২০টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ
বিভাগের ২৯ কিলোমিটার রাস্তা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৌলভীবাজারের
কুলাউড়া পৌর এলাকার রাস্তাগুলো ১৫ দিন পরও বন্যার পানির দুই-তিন ফুট নিচে
রয়েছে।
ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক-মহাসড়ক সংস্কারে হাত দিতে হবে।
ভাঙাচোরা রাস্তা যেন কোনো দুর্ঘটনার কারণ না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
হাতে যে কদিন সময় আছে, এর মধ্যে যেটুকু সম্ভব রাস্তা মেরামত করা গেলে ঈদ
যাত্রার দুর্ভাবনা থাকবে না। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করে ঈদ যাত্রার
ভোগান্তি দূর করা হবে—এটাই প্রত্যাশা।