সখিপুরে যৌতুকের জন্য এক গৃহবধূকে
নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ রাবেয়া বেগম (২২)
মারপিটের চিহ্ন নিয়ে হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন বলে জানা গেছে। রাবেয়া
বেগম সখিপুর থানার কাঁচিকাটা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জবরদখল গ্রামের
গিয়াস উদ্দিন সরদারের মেয়ে।
এদিকে, হাসপাতালে ভর্তির তিনদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত রাবেয়া বেগমের
স্বামী কিংবা ওই পরিবারের কেউ তাকে দেখতে আসেননি এবং কোনও খোঁজ-খবরও
নেননি।
রাবেয়া বেগম জানান, ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর কাঁচিকাটা ইউনিয়নের ৯ নম্বর
ওয়ার্ডের চরজিংকিং গ্রামের আজিজুল ব্যাপারীর ছেলে বিল্লাল ব্যাপারীর (২৭)
সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। তাদের নুসরাত নামে দুই বছরের মেয়ে রয়েছে।
বিয়ের সময় লেনদেনের কোনও কথা ছিল না। কিন্তু বিয়ের ছয় মাস পার হতে না হতেই
রাবেয়ার পরিবারের কাছে যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেলের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন
বিল্লাল। রাবেয়ার পরিবার আড়াই লাখ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল কিনে দেয়। এছাড়াও
সম্প্রতি ব্যবসা করার কথা বলে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। সেই টাকাও দেয়া
হয়েছে বরে জানান রাবেয়া।
তিনি জানান, গত ৩০ ডিসেম্বর তার শাশুড়ি উম্মে কুলসুম (৬০), ভাসুর দুদু
মিয়া ব্যাপারী (৩৫), আমির হোসেন ব্যাপারী (৪০) ও ননদ আকলিমা বেগম (৩২) তাকে
আবার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে তিন লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলেন। এরপর
থেকে তারা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের পাশাপাশি মারপিট শুরু করে।
রাবেয়া জানান, গত ৩ জানুয়ারি তার স্বামী, শ্বাশুড়ি, ভাসুর ও ননদ টাকার
ব্যবস্থা না করার অপরাধে তাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করেন। মারপিটের একপর্যায়ে
তিনি জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেন। নির্যাতনের খবর পেয়ে পরদিন রাবেয়ার বড় ভাই আল
আমিন সরদার ও প্রতিবেশি আলম মোল্লা তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে
ভর্তি করেন। এরপর থেকে মারপিটের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে
আছেন।
রাবেয়া বেগম বলেন, আমি সংসার করবো কিন্তু বিল্লালের পরিবারের সদস্যরা
যৌতুকের কারণে আমাকে অন্যায়ভাবে মারপিট করেছেন, তার সুষ্ঠু বিচার চাই। আর
গরীব বাবার পক্ষে যৌতুকের এত টাকা জোগার করা সম্ভব না। তারা সময় দিলে হয়তো
আমার পরিবার টাকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতো।'
এ বিষয়ে রাবেয়ার স্বামী বিল্লাল মুঠোফোনে বলেন, ‘গত ৩ জানুয়ারি সকালে
মেয়েকে মারধর করেন রাবেয়া। আমি ও আমার মা এর প্রতিবাদ করলে আমাদের অকথ্য
ভাষায় গালাগাল করেন। আমার মাকে মারধর করেন রাবেয়া। তাই আমি লাঠি দিয়ে তাকে
কয়েকবার আঘাত করি, থাপ্পড়ও দেই। সেদিন রাতে ঘুমের মধ্যে আমার মাথায় কাঠ
দিয়ে আঘাত করেন রাবেয়া। এতে আমার মাথা ফেটে যায়। আমি যৌতুক চাইনি।’
সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার
মুঠোফোনে বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার আমাকে কিছু জানায়নি। এখনো কেউ
অভিযোগ নিয়ে আসেননি। লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে।