চিকিৎসার আড়ালে রংপুরে ‘প্রধান মাদকাসক্তি নিরাময় পুনর্বাসন কেন্দ্র’
নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রোগী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার
গভীর রাতে এক রোগীকে অমানুষিক নির্যাতনের সময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন
ছুটে গেলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। তখন এলাকবাসী ও রোগীর স্বজনরা কেন্দ্রটি
ঘেরাও দিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের
কর্মকর্তারা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং চিকিৎসাধীন ২৯ রোগীকে উদ্ধার
করেন। এর মধ্যে ২৭ জনকে অভিভাবকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এক রোগীর কয়েকজন
স্বজন প্রধান মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যান। এ সময় প্রায় সব রোগী
চিকিৎসার আড়ালে তাদের ওপর চলা শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন। রোগীরা
তাদের উদ্ধারের অনুরোধ জানান। নির্যাতনের বর্ণনা শুনে এলাকবাসী ও স্বজনরা
প্রতিষ্ঠানটি ঘেরাও দিয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে কেন্দ্রের ইনচার্জ আকিব
হোসেনসহ সবাই পালিয়ে যান। নিরাময় কেন্দ্রের রোগীদের অভিযোগ, প্রতিদিনই
তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। কেন্দ্রের ইনচার্জ আকিল ও
মোহন লোহার পাইপ দিয়ে তাদের বেধড়ক পেটান। ইলেকট্রিক শক দেওয়া ছাড়াও
বিবস্ত্র করে শরীরের বিভিন্ন অংশে মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে নির্যাতন করা হয়।
ঠিকমতো খাবার দেওয়া হত না। তিনটি কক্ষে ৩০-৩৫ জনকে একসঙ্গে মেঝেতে গাদাগাদি
করে রাখা হয়। কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ জানালে তাদের আলাদা কক্ষে নিয়ে ইচ্ছামতো
পেটানো হয়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করতে থাকেন মাদকাসক্ত
রোগীরা। চিকিৎসাধীন মাদকাসক্ত এক রোগী জানান, সঙ্গদোষে নেশা ধরেছিল।
বাবা-মা ওই নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করান। প্রায় চার মাস ধরে সেখানে রয়েছেন।
কথায় কথায় তাকে মারধর করা হতো। শাস্তি হিসেবে না খাইয়ে রাখা হতো।
আরেক রোগী বলেন, ‘অপরাধীকে যেভাবে পেটানো হয় আমাকেও এখানে প্রতিদিন পেটানো
হতো। চিৎকার করলে জোরপূর্বক ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেওয়া হতো। আবার ঘুম ধরলে
চোখে মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে দেওয়া হতো।’
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাব-ইন্সপেক্টর তাহেদুল আলম সোহাগ
বলেন, ‘রোগী নির্যাতন, অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নানা অব্যবস্থাপনার
প্রমাণ পেয়েছি। লাইসেন্স বাতিল করে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালার পদক্ষেপ নেওয়া
হয়েছে।’ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন জানান,
নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ২৯ রোগীর মধ্যে ২৭ জনকে তাদের অভিভাবকে
হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুজনের অভিভাবক এলে তাদেরও হস্তান্তর করা হবে।
তিনি জানান, নিরাময় কেন্দ্রটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সিলগালা করেছে।
আইনগত ব্যবস্থাও তারা নেবে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরন্ব কুমার রায় বলেন,
স্বাস্থ্য বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গেছে। তারা পুরো বিষয়
পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নেবে।