ঐতিহ্যের পারদে রোমাঞ্চকর লড়াই

জহির শান্ত ।।
আবাহনী-মোহামেডানের
ফুটবল ম্যাচ মানেই ঐতিহ্যের লড়াই। দেশের ঐতিহ্যবাহী এ দুই কাবের খেলাকে
ঘিরে দর্শক-সমর্থকদের মাঝেও থাকে ‘লড়াইয়ের’ আমেজ। মাঠে খেলেন খেলোয়াড়েরা,
আর তাদের বল-পায়ের ভেলকিতে গ্যালারিতে গলা ফাটান সমর্থক-দর্শকেরা। এর
ব্যতিক্রম হয়নি কুমিল্লা স্টেডিয়ামেও। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) কুমিল্লা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় আবাহনী বনাম
মোহামেডান ম্যাচ। খেলা ঘিরে বেশ ক’দিন ধরে আগ্রহ ছিলো ফুটবল প্রেমীদের
মাঝে। এর আঁচ লক্ষ্য করা গেছে স্টেডিয়ামেও। ঘরের কাছে জাতীয় দলের তারকাদের
সঙ্গে খেলছেন বিদেশি ফুটবলাররা। এমন দিনে ঘরে বসে থাকতে পারেননি
কুমিল্লাবাসী। করোনার ভীতিকে তোয়াক্কা না করে মাঠে এসে উৎসাহ দিয়েছেন দুই
দলের খেলোয়াড়দের।

গেলোবারের মতো চলতি মৌসুমেও কুমিল্লার ভাষাশহীদ
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামকে নিজেদের হোম ভেন্যু বানিয়েছে মোহামেডান।
সেখানে বসেই স্টেডিয়াম মাতিয়ে রাখলেন কয়েক হাজার দর্শক। স্থানীয় লোকজনের
পাশাপাশি ঢাকা, চাঁদপুর থেকে বাস ভরে ভরে দর্শক আসতে দেখা গেছে। আবাহনীর
সমর্থকও কম ছিলেন না গ্যালারিতে। যেন ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।’
মাঠের খেলার ফলও কিন্তু হয়েছে ঠিক সেরকম। ঐতিহ্যের পারদে উত্তেজনায় ঠাসা
ম্যাচটি ড্র হয়েছে ২-২ গোলে। উত্তেজনা, আকর্ষণ, গোল-কী ছিল না ম্যাচে!
কুমিল্লার দর্শকেরা এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারতেন না। সার্থক হয়েছে ৩০
টাকা মূল্যের টিকিট কেটে গ্যালারিতে ঢোকা। বৃহস্পতিবার কুমিল্লার ভাষা
সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে দেশের দুই ঐতিহ্যবাহী কাবের লড়াই দেখতে
জড়ো হয়েছিল অসংখ্য দর্শক। এই দৃশ্য যেন বাংলাদেশের সোনালী সময়ের ফুটবলকে
স্মরণ করিয়ে দেয়। মোহামেডান-আবাহনীর খেলোয়াড়রাও নিরাশ করেনি সমর্থকদের।
রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ উপহার দিয়েছে দুই দল। সাম্প্রতিক সময়ের শক্তিমত্তায়
এগিয়ে ছিল আবাহনী। লিগে এর আগের তিন ম্যাচের তিনটিতে দাপুটে জয়ের
আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামে তারা। অন্যদিকে মোহামেডান জয়ের পাশাপাশি হারের
স্বাদও নিয়ে নিয়েছিল। গত ফেডারেশন কাপেও তারা বিধ্বস্ত হয়েছে আবাহনীর হাতে।
তবে এবার কোনো ছাড় দিল না শন লেনের শিষ্যরা। ১৪তম মিনিটে ফ্রান্সিসকো
তোরেসের গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী। কিন্তু সেই ব্যবধান তারা ধরে রাখতে পারল
মাত্র ৩ মিনিট। মোহামেডানকে সমতায় ফেরান দিয়াবাতে। প্রথমার্ধে ফের এগিয়ে
যায় আবাহনী।
এবারের গোলটি আসে জুয়েল রানার পা থেকে। তবে বিরতি থেকে
ফিরেই গোল শোধ করে দেয় মোহামেডান। ৬৬তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলে দলকে হার
থেকে রা করেন দিয়াবাতে। চার বছর পর ঢাকার বাইরে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ।
দারুণ উপভোগ্য এই ম্যাচ কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থাকেও আশাবাদী করে
তুলেছে। সামনে হয়তো আরও জমে উঠবে প্রিমিয়ার লিগে এই ভেন্যুর খেলা।
বসুন্ধরা
কিংস ও মোহামেডানের সৌজন্যে এই ভেন্যুতে প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে এবার। গতকাল
গ্যালারি প্রায় ভরাই ছিলো। ১৩-১৪ হাজার দর্শক প্রাণ ভরেই দেখল খেলা। আর
সেটা সম্ভব হয়েছে মোহামেডান সামর্থ্যের চেয়েও ভালো খেলায়।
ম্যাচ শেষে
আনন্দ ছিলো মোহামেডান শিবিরে। সাবেক খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা মাঠে নেমে
অভিনন্দন জানিয়েছেন সাদা-কালোর খেলোয়াড়দের। তাঁরা খুশি। না জিতলেও
মোহামেডান যে মাতিয়ে দিল কুমিল্লার গ্যালারি।