দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। প্রতিবছর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের যোগ্য যে বিপুলসংখ্যক তরুণ সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শেষে বের হচ্ছেন, তাঁদের সবাই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারছেন না। ফলে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে সম্পূর্ণ বেকার ৩৩.৩২ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে ৪৭.৭ শতাংশ সার্বণিক চাকরিতে, ১৮.১ শতাংশ পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। এর আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেশে মোট শ্রমশক্তির ৪.২ শতাংশ বেকার বলে জানানো হয়েছিল।
শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়তে থাকার অনিবার্য ফল কী হতে পারে, তা উঠে এসেছে গত শনিবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ‘চাকরির বাজারে প্রতারকচক্র’ শীর্ষক খবরে । পুলিশ সদর দপ্তরকে উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়েছে, বর্তমানে শহর ও গ্রাম সবখানেই নানাভাবে প্রতারণা চলছে। এর মধ্যে চাকরিপ্রত্যাশীরা সবচেয়ে বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চক্রের পকেটে ঢুকেছে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরে প্রতারকচক্রের অন্তত এক হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রতারণা থেমে নেই। অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণা করে এই চক্র। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অফিস খোলা হয়। পত্রপত্রিকায় আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেয়ালে বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির জন্য আবেদন করে অনেকে প্রতারণার শিকার হন। দক্ষ প্রতারকচক্র অনেক ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাও নিয়ে থাকে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের পর জামানত হিসেবে টাকা নেওয়া হয়ে থাকে। এরপর একসময় প্রতারকচক্র অফিস গুটিয়ে সটকে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে বেশি হয়েছে। বাণিজ্য বড় হয়েছে এবং অর্থনীতির বহুমুখিতার কারণে বেকারের সংখ্যা বাড়ার কথা নয়। কিন্তু তার পরও বেকারের সংখ্যা বাড়ছে কেন? চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটছে কেন? বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দেশে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় বেকার বেড়েছে। আবার শিক্ষিতের হার বাড়লেও তাঁদের দক্ষতার অভাব রয়েছে। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে চাকরির সমন্বয় ঘটাতে হবে। অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করার কোনো বিকল্প নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
দেশে নতুন করে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এর পাশাপাশি চাকরি নিয়ে প্রতারণা বাণিজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থাও নিতে হবে।