ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
চোরের ১০ দিন গৃহস্থের একদিন
স্বর্ণ চুরি করতে এসে চকরিয়ার জনপ্রতিনিধি ‘দস্যুরানী’ আরজ কুমিল্লায় ধরা
Published : Thursday, 25 February, 2021 at 12:00 AM, Update: 25.02.2021 2:04:27 AM

চোরের ১০ দিন গৃহস্থের একদিনএবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
প্রথমবার স্বর্ণ চুরি করে পার পেয়ে গেলেও দ্বিতীয়বারে রা হয়নি। জুয়েলারি দোকান মালিকের সন্দেহ হওয়ায় ক্রেতারূপী দুই নারী ও এক পুরুষ চোরকে আটক করে তল্লাশি চালিয়ে চুরি যাওয়া স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে একই দোকান থেকে একই চোর দলের একমাস আগে প্রথমবারের চুরির ঘটনাও ধরা পড়ে। পরে তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বিস্ময়কর তথ্য হলো, কুমিল্লায় ধরা পড়া এই স্বর্ণ চোর দলের নেতা কক্সবাজার জেলার একজন জনপ্রতিনিধি। তিনি চকরিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আরজ খাতুন। এলাকায় তিনি ‘দস্যুরানী’ নামে খ্যাত।
আন্তঃজেলা স্বর্ণ চোর দলের ধরা খাওয়ার এই ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা সদরের আপন অর্নামেন্টস নামক একটি জুয়েলারি দোকানে। এ ঘটনায় দোকান মালিক জয়নাল আবেদীন আপন মিয়া বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করলে গত মঙ্গলবার বিকেলে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার ৩ চোরÑ কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান মোসা. আরজ খাতুন (৫২), একই গ্রামের ফররুখ আহম্মদের ছেলে শাহাদত হোসেন (২০) ও কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরি এলাকার মৃত রাসেল মিয়ার স্ত্রী পাখি বেগম (৩৫)।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে দেবীদ্বার উপজেলা সদরের আপন অর্নামেন্টস থেকে ৩ ভরি ওজনের ২টি স্বর্ণের চেইন ও ১ জোড়া কানের দুল চুরি হয়। ওইদিন রাতে স্টক হিসাবে গড়মিল দেখে সিসিটিভি ফুটেজে নারী চোরের মাধ্যমে চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হন দোকান মালিক। কিন্তু তাদের হদিস পাওয়া যায়নি।
ওই ঘটনার এক মাস পর গত সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ওই তিনজন ক্রেতা সেজে আবার এই জুয়েলারি দোকানে আসে। গহনা দেখার এক পর্যায়ে কৌশলে একটি নাকফুল ও একটি আংটি চুরি করে দোকান ত্যাগ করে। এ সময় সেলসম্যান স্বর্ণ গুছিয়ে রাখার সময় গড়মিল দেখতে পেয়ে ওই তিন নারী-পুরুষকে ধরে এনে তল্লাশি করে চুরি যাওয়া নাকফুল ও আংটি উদ্ধার করা হয়। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আগের চুরির ঘটনায়ও তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হয়।
দেবীদ্বার থানার ওসি জহিরুল আনোয়ার জানান, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ওই তিনজনের একমাস আগে চুরির ঘটনাও ধরা পড়েছে। এ ঘটনায় দোকান মালিক বাদী হয়ে ৩ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

‘দস্যুরানী’ ধরায় চকরিয়ায় স্বস্তি:
ওদিকে কক্সবাজারের একটি অনলাইন পত্রিকার সূত্রে জানা যায়, আলোচিত উপকূলীয় দস্যুরানী হিসেবে পরিচিত আরজ খাতুন গ্রেফতারের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেছেন এলাকাবাসী। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল এলাকাবাসী। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ টু-শব্দ করতে পারতো না। এতোদিন আরজ খাতুন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
গত বছরের ২৪ মে আরজ খাতুনের নির্দেশে যুবলীগ নেতা আনছুর চকরিয়ার ঢেমুশিয়ায় এক বৃদ্ধকে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন করে এবং নির্যাতনের চিত্র ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এলাকাবাসী জানায়, চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নটি এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আরজ খাতুনের সহযোগী সন্ত্রাসী আনছুর নেতৃত্বে দা-বাহিনী, সেলিম বাহিনী, ডালিম বাহিনী, শহিদ বাহিনী ও খোকন বাহিনী নামের বেশ কয়েকটি বাহিনী রয়েছে। এসব বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে দস্যুরানী আরজ খাতুন। যাদের কাজ ডাকাতি, দখলবাজি, ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসাবে কাজ করা, কাউকে তোয়াক্কা না করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে সাধারণ মানুষদের জিম্মি কওে অপকর্ম চালানো। তাদেরকে চাঁদা না দিয়ে কেউ শান্তিতে থাকতে পারে না। লবণ মাঠ, মাছের ঘেরসহ প্রত্যেকটি ব্যবসা তাদের চাঁদা দিয়েই করতে হয়।
আরজ খাতুন বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বহু মামলা চলমান রয়েছে। স্থানীয় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আলমকে নির্যাতনের ঘটনায় পুরো উপজেলাজুড়ে আরজ খাতুন বাহিনীর অপকর্ম উঠে আসে।