তানভীর দিপু ||
কুমিল্লায়
ট্রেনের ধাক্কায় বা ট্রেনে কাটা পড়ে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। গত ৩
মাসে তিন পরিবারের ৭ জনসহ অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে রেললাইনে। গতকাল
বৃহস্পতিবারও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান মা ও
ছেলে। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি একইভাবে নাঙ্গলকোট উপজেলায় প্রাণ হারান বাবা ও
ছেলে। এ ছাড়া গত ৩০ ডিসেম্বর কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছায় ট্রেনের ধাক্কায়
প্রাণ হারান সিএনজি অটোরিকশার আরোহী বাবা-মা-মেয়ে।
রেলওয়ে পুলিশের তথ্য
মতে, কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে থানা ও কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন ফাঁড়ির
অন্তর্গত সীমানায় গত তিন মাসে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ট্রেনে কাটা পড়ে।
১১টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। যেহেতু এসব ঘটনার বেশিরভাগই দিনের বেলায়
ঘটেছে তাই ঘটনাগুলোকে প্রাথমিকভাবে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হিসেবে ধরে
নিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। আর রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, কুমিল্লার
বিভিন্ন উপেজেলায় রেললাইনের পাশেই যুগ যুগ ধরে গড়ে উঠেছে জনবসতি। অসচেতনতার
কারণে এসব জনবসতির পাশের রেললাইনেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
মনোহরগঞ্জ,
চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, সদর দক্ষিণ, সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া
উপজেলার উপর দিয়ে গেছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলরুট ঢাকা-চট্টগ্রাম
রেললাইন। আর এই রেললাইনের পাশেই জনবসতি গড়ে উঠেছে বেশি। এসব জায়গায় ঘন ঘন
দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে জনসাধারণের অসচেতনতাকেই দায়ী করছে রেল পুলিশ।
লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন কুমিল্লার কাগজকে
বলেন, যেহেতু অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে রেললাইনে সবসময়ই ১৪৪ ধারা জারি থাকে,
তাই লাইন পারাপারের সময় জনগণকেই সচেতন হতে হবে। রেললাইনে দুর্ঘটানা এড়াতে
সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমরা রেলপুলিশ বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে
রেললাইনের পার্শ্ববর্তী বসবাসকারীদের আরো সচেতন করার চেষ্টা করবো।’
রেলওয়ে
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ
হারান চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের বুধরা গ্রামের মানিক মিয়ার
স্ত্রী সুমি আক্তার (২১) ও তার ৩ বছরের শিশুসন্তান মাশরাক হোসেন। সুমি
আক্তার ছেলে মাশরাককে নিয়ে গতকাল সকালে বাড়ির নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে
গুনবতী বাজারে যান। ফেরার পথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সোনার বাংলা
ট্রেনের চাপায় মারা যান দু’জনেই। ঘটনাটি নিশ্চিত করেন লাকসাম রেলওয়ে
পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্বাস হোসেন। নিহতদের মরদেহ রেললাইনের পাশ থেকেই নিয়ে
যান স্বজনেরা।
এর আগে, গত ১১ জানুয়ারি সোমবার বিকেল সোয়া পাঁচটার
দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার বান্নাঘর গ্রামের প্রয়াত দলিলুর রহমানের ছেলে
মাহবুবুল হক (৫০) তাঁর ছেলেকে নিয়ে রেললাইনের পাশে একটি দোকানে যান। বাবা
ছেলের জন্য চিপস কেনার সময় ছেলে জিসান (৫) রেললাইনে উঠে যায়। এ সময়
ঢাকাগামী মহানগর গোধূলি ট্রেন চলে আসে। ছেলেকে বাঁচাতে বাবা এগিয়ে গেলে
ট্রেনে কাটা পড়ে বাবা-ছেলে দুজনেরই মৃত্যু হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা
গেছে, নিহতদের বাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন ঘেঁষা। এর আগেও তাদের পরিবারের
আরো দুইজন ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। একই স্থানে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মালবাহী
ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান ওমরেন্নেছা (৬৫) নামের আরেক বৃদ্ধা।
এদিকে,
গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা রেলক্রসিং এলাকায় মালবাহী
ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী ফরিদ মুন্সী (৬৫) ও তাঁর
স্ত্রী পেয়ারা বেগম (৫৫) নিহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একই
দুর্ঘটনায় আহত তাঁর মেয়ে আঁখি আক্তার (১০)। দুর্ঘটনায় আহত হন ওই সিএনজি
অটোরিকশার চালকসহ আরো দুইজন। নিহতদের বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলার গজারিয়া
গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদ মুন্সী তাঁর পরিবারের
সদস্যদের নিয়ে ডাক্তার দেখাতে সিএনজি অটোরিকশায় করে কুমিল্লা শহরে
যাচ্ছিলেন। অটোরিকশাটি নগরের শাসনগাছা রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং এলাকা অতিক্রম
করার সময় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি মালবাহী ট্রেন সেটিকে ধাক্কা দেয়।
ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি অন্তত ২০০ গজ উত্তর দিকে গিয়ে পড়ে। তখন
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া অটোরিকশা থেকে গুরুতর আহত ফরিদ মুন্সী ও তাঁর পরিবারের
সদস্যদের বের করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মারা
যান ফরিদ ও তার স্ত্রী পেয়ারা বেগম। পরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান
তার মেয়ে আঁখি।