অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভের খবর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে পাঁচটি সংবাদমাধ্যমের লাইসেন্স প্রত্যাহার করে নিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। মিজিমা, ডেমোক্র্যাটিক ভয়েস অব বার্মা (ডিভিবি), খিট থিট মিডিয়া, মিয়ানমার নাউ এবং সেভেন ডে নিউজ বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এমআরটিভি’র এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, এসব সংবাদমাধ্যম আর কোনও মিডিয়া প্লাটফর্ম কিংবা মিডিয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্প্রচার কিংবা লেখা বা কোনও তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫৪ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। সেনাশাসকদের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে গত সোমবার ধর্মঘটের ডাক দেয় দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ট্রেড ইউনিয়নগুলো। ধর্মঘটের ফলে বন্ধ থাকে বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের দোকানপাট, কলকারখানা। নির্মাণ, কৃষি ও পণ্য উৎপাদনসহ অন্তত নয়টি খাতের ট্রেড ইউনিয়ন সোমবারের ধর্মঘটে অংশ নেয়। এছাড়া আইন প্রয়োগের অজুহাতে হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়েও মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা বাহিনী।
সোমবার রাতে যেসব সংবাদমাধ্যমের লাইসেন্স প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে সেগুলো গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নিবিড়ভাবে বিক্ষোভের খবর প্রচার করেছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনা সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক নিপীড়নের খবরও দিয়েছে তারা।
লাইসেন্স বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার আগে সোমবার সন্ধ্যায় মিয়ানমার নাউ-এর কার্যালয়ে অভিযান চালায় সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনীর সমালোচক এই সংবাদমাধ্যমটিতে অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার এবং সংবাদ কক্ষের ডাটা সার্ভার এবং অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করে নিয়ে যায়। তবে অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা জোরালো হতে থাকায় গত ২৮ জানুয়ারি থেকেই ওই কার্যালয়টি খালি করে ফেলে মিয়ানমার নাউ কর্তৃপক্ষ।
সেনাবাহিনীর অভিযানে মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত এক হাজার আটশ’ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে সেনা সরকার। আটককৃতদের মধ্যে বেশ কয়েক জন সাংবাদিকও রয়েছেন। গত সপ্তাহে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ডিভিবিতে কর্মরত কং মিয়াত হ্লাইং নামের এক সাংবাদিকের বাড়ি ঘিরে ফেলেছে সেনা সদস্যরা। নিজ বাড়ির বারান্দা থেকে প্রতিবেশিদের কাছে সহায়তা চেয়ে চিৎকার করছিলেন তিনি। নেপথ্যে বন্দুকের গুলির শব্দও শোনা যায়। পরে ডিভিবি জানায় ওই সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে।
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র ফটোসাংবাদিক থেইন জাও সহ ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভ্যুত্থানবিরোধী খবর প্রকাশের দায়ে আনা এই অভিযোগে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তাদের।
ডিভিবি জানিয়েছে লাইসেন্স বাতিল করায় তারা অবাক হননি। স্যাটেলাইট টেলিভিশন এবং অনলাইনে সম্প্রচার অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে তারা। নির্বাহী পরিচালক আয়ে চান নাইং বলেন, ‘আমরা সাংবাদিক এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু বর্তমানে বিক্ষোভের সময় পুরো দেশই নাগরিক সাংবাদিকে পরিণত হয়েছে। ফলে তথ্যের প্রবাহ বন্ধ করার কোনও পথ সেনা কর্তৃপক্ষের নেই।’