শবেমিরাজের তাৎপর্য ও শিক্ষা
Published : Friday, 12 March, 2021 at 12:00 AM
মুফতি তাজুল ইসলাম ।।
ইসলামের ইতিহাসে শবেমিরাজ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যখন সবদিক থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) মারাত্মক সংকট ও শোকের সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই দুঃসময়ে আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবিবকে তাঁর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ দিয়েছিলেন। পার্থিব জীবনের অভিভাবক চাচা আবু তালেবের মৃত্যু, প্রাণপ্রিয় সহধর্মিণী উম্মুল মুমিনিন খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকাল, তায়েফের হৃদয়বিদারক ঘটনা, মক্কার কাফিরদের অমানবিক আচরণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন বিপন্ন ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সে সময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ করে দিয়ে তাঁকে সান্ত¡না দেওয়া হয়।
মিরাজে মহান আল্লাহ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা মুহাম্মদ (সা.)-কে পুরস্কারস্বরূপ কয়েকটি বস্তু প্রদান করেন-এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফজিলতের দিক দিয়ে ৫০ ওয়াক্ত নামজের সমান। দুই. সুরা বাকারার শেষের দুটি আয়াত মেরাজেই অবতীর্ণ হয়। তিন. উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদের ক্ষমা করার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। চার. নামাজে পঠিত ‘আত্তাহিয়্যাতু’।
মহানবী (সা.) মিরাজ থেকে ফিরে আসার পর সুরা বনি ইসরাইলের মাধ্যমে ১৪টি দফা মানুষের সামনে পেশ করেন। বর্তমান সময়ে ক্ষয়ে যাওয়া সমাজ সংস্কারে এই ১৪ দফা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা যাবে না।
২. মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘...মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। তাঁদের একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় যদি তোমাদের সামনে উপনীত হয় তাহলে তাঁদের সঙ্গে উহ্ শব্দটি পর্যন্ত কোরো না। তাঁদের ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না; বরং তাঁদের সঙ্গে মর্যাদাসূচক কথা বলো। তাদের সামনে বিনয়ী থেকো আর দোয়া করতে থাকো-‘হে আমার প্রতিপালক, তাঁদের প্রতি তেমনি দয়া করো, যেমনি তাঁরা শৈশবে আমাদের লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৩-২৪)
৩. নিজ কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে।
৪. আত্মীয়স্বজনকে তাদের অধিকার দিয়ে দিতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তাদের অধিকার দাও। আর মুসাফিরদের হক আদায় করো। (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬)
৫. অপব্যয় করা যাবে না।
৬. মানুষের অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হলে বিনয়ের সঙ্গে তা প্রকাশ করতে হবে। ছলচাতুরি ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া যাবে না।
৭. ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেহিসাবি হওয়া যাবে না। আবার কৃপণতাও প্রদর্শন করো না।
৮. সন্তানদের হত্যা করা যাবে না। এটি মহাপাপ।
৯. জেনা-ব্যভিচারের কাছেও যাওয়া যাবে না। কেননা এটি নিকৃষ্ট ও গর্হিত কাজ।
১০. কোনো প্রাণীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা যাবে না। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীকে এই অধিকার দেওয়া হয়েছে যে সে চাইলে রক্তের বিনিময় চাইতে পারে। তবে প্রতিশোধের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
১১. এতিমের সম্পদের ধারেকাছেও যাবে না।
১২. ওজনে কম দিয়ে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। দাঁড়িপাল্লা সোজা করে ধরতে হবে।
১৩. যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে মতামত দেওয়া অন্যায়। চোখ, কান, অন্তর সব কিছুই কিন্তু একদিন জিজ্ঞাসিত হবে।
১৪. জমিনে দম্ভসহকারে চলা যাবে না। এগুলো সবই মন্দ ও ঘৃণিত কাজ।
এই ১৪ দফাই মিরাজের প্রকৃত শিক্ষা।