কুরআনের বর্ণনায় হজরত আদম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব
Published : Friday, 12 March, 2021 at 12:00 AM
হজরত আদম আলাইহিস সালাম দুনিয়ার প্রথম মানুষ এবং প্রথম নবি। মাটির সব উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে সুন্দর অবয়ব দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাঁকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে হজরত আদম আলাইহিস সালামের ৫টি শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেছেন।
> আল্লাহর হাতে সৃষ্টি
আল্লাহ তাআলা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে মাটির সব উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। শয়তানকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা এ মর্মে কুরআনে ঘোষণা দেন-
‘আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস! আমি নিজ হাতে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?’ (সুরা সোয়াদ : আয়াত ৭৫)
> রূহ দান
আল্লাহ তাআলা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে মাটি দিয়ে তৈরি সম্পন্ন করার পর ফুঁ দেয়ার মাধ্যমে তাঁকে রূহ দান করেছিলেন। সে সুসংবাদটি আল্লাহ তাআলা এভাবে তুলে ধরেন-
যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতাদের বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব। যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সম্মুখে সেজদায় নত হয়ে যাবে।’ (সুরা সোয়াদ : আয়াত ৭১-৭২)
> সব বস্তুর নামের শিক্ষা
আল্লাহ তাআলা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি ও রূহ দানের পর তাঁকে সব জিনিসের নাম শিখিয়েছেন। যেন সব সৃষ্টির উপর তিনি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে এ শ্রেষ্ঠত্বের কথা এভাবে তুলে ধরেন-
‘আর আল্লাহ তাআলা আদমকে সব বস্তু-সামগ্রীরীর নাম শেখালেন। তারপর সে সব বস্তু-সামগ্রীরীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৩১)
তারা (ফেরেশতারা) বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোনো কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদের শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতিত); নিশ্চয়ই তুমি প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৩২)
তিনি (আল্লাহ) বললেন, হে আদম! এসবের নাম ফেরেশতাদের বলে দাও। তারপর যখন তিনি (আদম) সে সবের নাম বলে দিলেন, তখন তিনি (আল্লাহ) বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি যে, আমি আসমান ও জমিনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? আর সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর!’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৩৩)
> ফেরেশতাদের সেজদা
আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতিনিধিত্বের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতে হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সেজদা করতে ফেরেশতাদের প্রতি নির্দেশ দেন। ফলে সব ফেরেশতা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সেজদা করে। এটি ছিল হজরত আদম আলাইহিস সালামের অন্যতম শ্রেষ্ঠত্ব। সে ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘আর যখন আমি আদমকে (আলাইহিস সালাম) সেজদা করার জন্য ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলাম, তখনই সবাই সেজদা করল, ইবলিস ব্যতিত। সে (ইবলিস নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৩৪)
> সবার চেয়ে স্বাতন্ত্র সৃষ্টি
আল্লাহ তাআলা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে বিশেষ মর্যাদায় নিজ হাতে মাটির সার-নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর দুনিয়ার সব মানুষকে তিনি ‘বাবা-মা’র মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। কুরআনুল কারিমে এ শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণাও দেন মহান আল্লাহ-
‘যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে (হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির মাধ্যমে) মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।’ (সুরা সাজদা : আয়াত ৭)
‘অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।’ (সুরা সাজদা : আয়াত ৮)
‘অতঃপর তিনি তাকে (মায়ের পেটে) সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদের দেন কান, চোখ ও অন্তর। আর তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা সাজদা : আয়াত ৯)
আল্লাহ তাআলা এসব শ্রেষ্ঠত্বের মাধ্যমে মূলত মানুষকেই সম্মানিত করেছেন। দুনিয়ায় তার প্রতিনিধি হিসেবে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বই তুলে ধরেছেন।
পক্ষান্তরে বিতাড়িত শয়তান (ইবলিস) তার যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে অভিশপ্ত হয়ে চির জাহান্নামি হয়েছে। আল্লাহর সামনে তার যুক্তির ধরন ওঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়। সে বলেছিল-
‘আমি আদম থেকে উত্তম। কেননা আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন আর তাঁকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মুমিন মুসলমানের উচিত, মানুষের প্রতি আল্লাহর দেয়া সব নেয়ামতের কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা। আল্লাহর হুকুম-আহকাম মেনে চলা। দুনিয়ার সব কাজে আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠত্বকে ধরে রেখে পরকালের সফলতায় কুরআনের আলোকে জীবন গড়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের আলোকে জীবন গড়া এবং আল্লাহর যথাযথ শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।