দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ আর নেই।
সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলে জনকন্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আজাদ সোলায়মান জানান।
তিনি বলেন, “ভোর ৪টার দিকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে তাকে ওই হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল।”
আতিকুল্লাহ খান মাসুদের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনকণ্ঠ সম্পাদকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছেন।
আজাদ সোলায়মান জানান, দুই ছেলের একজন বিদেশ থাকায় আতিকউল্লাহ খান মাসুদের মরদেহ এখন শাহবাগে একটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। ছেলে দেশে ফেরার পর জনকণ্ঠ সম্পাদককে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আতিকউল্লাহ খান মাসুদ গ্লোব-জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তার সম্পাদনায় ১৯৯৩ সালে দৈনিক জনকণ্ঠ প্রকাশিত হয়।
এক সঙ্গে কয়েকটি জেলা থেকে পত্রিকাটি ছাপার ব্যবস্থা করায় প্রতিদিন সকালে দ্রুত সারা দেশে পৌঁছে যেত জনকণ্ঠ। বিষয়টি সে সময় বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে আলোড়ন তোলে, আতিকুল্লাহ খানও মাসুদও আসেন আলোচনায়। অবশ্য পরে আর সে ব্যবস্থা থাকেনি।
১৯৫১ সালের ২৯ অগাস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলার মেদিনী মণ্ডল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তরুণ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।
তার আগে কলেজে পড়ার সময় ব্যবসা শুরু করেন আতিকুল্লাহ খানও মাসুদ। সে সময় ধারের টাকায় ব্যবসা করলেও একাত্তরের যুদ্ধ শুরুর আগে আগে তার সামনে নতুন সুযোগ আসে। পশ্চিম পাকিস্তানে তখন পানের দাম হু হু করে বাড়ছিল। আতিকুল্লাহ খানও মাসুদ বাংলাদেশ থেকে পান নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে বিক্রি করে ভালো লাভ করেন, যা তাকে পরে ব্যবসার পুঁজি যোগায়।
স্বাধীনতার পর স্নাতন শেষ করে পুরোপুরি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন আতিকুল্লাহ খানও মাসুদ। তার গড়ে তোলা গ্লোব-জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের ব্যবসা এখন ছড়িয়ে আছে নির্মাণ, আবাসন, কৃষি, প্রযুক্তি, ওষুধ, কেবল, মেটাল কমপ্লেক্স, প্রকাশনাসহ বিভিন্ন খাতে।
জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালে যৌথ বাহিনী জনকণ্ঠ ভবন থেকে গ্রেপ্তার করে আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে। সে সময় তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়, সেসব মামলায় তাকে ৪৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০০৯ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জামিনে মুক্তি পান জনকণ্ঠ সম্পাদক। পরে মামলাগুলো খেকেও তিনি অব্যাহতি পান।