বিদেশে পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা ২০ থেকে ২২ জন। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লুট করা অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে তার সিন্ডিকেট ও আত্মীয়স্বজনের নাম জানতে পেরেছেন পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা জানান, পি কে হালদারের সহযোগী উজ্জ্বল কুমার নন্দী, নাহিদা রুনাই ও অবন্তিকা বড়ালসহ বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে উজ্জ্বল কুমার নন্দী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তার বক্তব্যে জানা যায় যে, পি কে হালদার সিঙ্গাপুর এবং কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় চার শতাধিক কোটি টাকা পাচার করেছেন। কানাডার টরেন্টোতে মার্কেট এবং বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। পি কে হালদার তার দুই বান্ধবী নাহিদা রুনাই ও অবন্তিকাকে নিয়ে ২২ থেকে ২৫ বার মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। ২০১৫ সালে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি হিসেবে নিয়োগ লাভ করার পরে তিনি নাহিদা রুনাইকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং অবন্তিকাকে পিপলস লিজিং-এর দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে নাহিদা রুনাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হেড অব বিজনেস হিসেবে যোগদান করার পর একই প্রতিষ্ঠানে এমডি হিসেবে যোগ দেন রাশেদুল হক। মূলত পি কে হালদারের নির্দেশেই লিজিংটি চলত। সোহাগ ও রাফসান রিয়াদ পি কে হালদারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র নিয়ে এসে রুনাইকে দিতেন এবং রুনাই-এর নির্দেশ মতো ঋণের ক্রেডিট মেমো প্রস্তুত হয়ে যেত এবং বোর্ডে স্যাংশন হতো। ঋণ বিতরণ পি কে হালদারের নির্দেশ মতো হতো এবং সব বিষয়গুলো মনিটরিং করতেন নাহিদা রুনাই। এভাবে ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে লুট হয় প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লুট করে, প্রায় একই মালিকানাধীন আরও প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান এফএএস ফাইন্যান্স, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পিপলস লিজিং থেকে একই কায়দায় আরও প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের নামে তুলে আত্মসাৎ করে। এফএএস ফাইন্যান্স থেকে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচার করা হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ নেই বললেই চলে। ফলে এসব ঋণ পরিশোধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।