শ্রীলঙ্কা
বাংলাদেশের এক অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র। ১৯৭১ সালেই শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে
স্বীকৃতি দিয়েছিল। সে হিসাবে এ বছর শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কেরও
৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। ৫০ বছর ধরেই দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।
ক্রমান্বয়ে বাড়ছে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও বাণিজ্যের পরিমাণ। এর ওপর
দ্বিপীয় বাণিজ্য জোরদার এবং দুই দেশের মধ্যে পণ্যের শুল্কমুক্ত
প্রবেশাধিকারের সুযোগ সৃষ্টি করতে ‘অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি’
(প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট, সংেেপ পিটিএ) সইয়ে একমত হয়েছে
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। দুই দেশের ল্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড
অ্যাগ্রিমেন্ট, সংেেপ এফটিএ) সই করা। এর আগেই অন্তর্র্বতী ব্যবস্থা হিসেবে
দুই দেশ পিটিএ সই করবে। শনিবার সকালে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা ও শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপরে মধ্যকার শীর্ষ বৈঠকের
পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এসব কথা বলেন।
দণি এশিয়ায়
শ্রীলঙ্কা একটি সমৃদ্ধ দেশ। জিডিপি, মাথাপিছু আয়, গণতন্ত্রসহ নানা সূচকে
শ্রীলঙ্কা যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে। দ্বীপদেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কার চারপাশেই
সমুদ্র। তাদের রয়েছে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণের বিপুল অভিজ্ঞতা। উভয় দেশই
দণি এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) এবং বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর
মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) সদস্য।
এ ছাড়া রয়েছে কার্যকর ও ঘনিষ্ঠ দ্বিপীয় সম্পর্ক। তাই বাংলাদেশের জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে
যোগ দিতে বাংলাদেশের আমন্ত্রণে সারা দিয়ে দুই দিনের সফরে শুক্রবার ঢাকায়
এসেছিলেন। এ সময় দুই নেতার শীর্ষ বৈঠক শেষে ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
এগুলো হলো বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে যুব উন্নয়ন জোরদারে সহযোগিতা,
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ (বিএআরসি) ও শ্রীলঙ্কার কাউন্সিল ফর
অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ পলিসির (এসএলসিএআরপি) মধ্যে সমঝোতা, বাংলাদেশ
কারিগরি শিা অধিদপ্তর এবং শ্রীলঙ্কার টার্সিয়ারি অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন
কমিশনের (টিভিইসি) মধ্যে কারিগরি দতা বিনিময়, শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের নার্স ও
স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিণে সহায়তা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল
অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও লক্ষ্মণ কাদির গামার ইনস্টিটিউট অব
ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যে সহযোগিতা এবং
২০২১-২৫ মেয়াদে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি বিনিময়।
চমৎকার দ্বিপীয়
সম্পর্ক সত্ত্বেও বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যের পরিমাণ
সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম। এ কারণে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি
হওয়া জরুরি। জানা যায়, এরই মধ্যে এই চুক্তির বিষয়ে একটি ‘যৌথ ফিজিবিলিটি
স্টাডি’ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করি, শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে মুক্ত
বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হবে। শ্রীলঙ্কান বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের বিশেষ
অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্প পার্ক ও হাই-টেক পার্কগুলোতে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে
পারেন। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে ‘ব্লু ইকোনমি’ (সমুদ্র অর্থনীতি) এগিয়ে নিতে
শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে অনেক সহযোগিতা করতে পারে। আমরা মনে করি, নিকট
ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে আরো জোরদার হবে।