Published : Monday, 19 April, 2021 at 12:00 AM, Update: 19.04.2021 1:14:45 AM
মাসুদ আলম।।
করোনাভাইরাস
সংক্রমণ রোধে চলমান সপ্তাহব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের চতুর্থ দিনেই
কুমিল্লায় মাঠ পর্যায়ে অনেকটা ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে। কুমিল্লা শহরের প্রধান
প্রধান সড়কের পাশের দোকানপাট, মার্কেট ও শপিং মলগুলো বন্ধ থাকলেও সরকারের
বিধিনিষেধ পেছনে ফেলে নগরীর সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা বেড়েছে। পাড়া মহল্লায়
খোলা ছিল অধিকাংশ দোকানপাট। অবাধে চলেছে মানুষজন। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের
লকডাউনে সরকারের বিধিনিষেধে কিছুটা কঠোরতা থাকলেও তৃতীয় দিন থেকে কুমিল্লার
শহর এবং উপজেলা সদরের হাটবাজার পর্যন্ত জনসমাগমকৃত সব জায়গায় সর্বাত্মক
লকডাউন চলেছে ঢিলেঢালা। অবশ্য লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসনের প্রচেষ্টা ও
নজরদারি ছিল যথেষ্ট। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের চিত্র কুমিল্লায় ছিল
একেবারেই নাজুক।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, লকডাউনে
সরকারের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে দোকান-পাট খোলা রাখা এবং সিএনজি চালিত
অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাসহ গণপরিবহন চালানো এবং মাস্ক ব্যবহার
না করায় কুলিল্লা জেলা শহর থেকে ১৮ উপজেলায় গত তিন দিনে জেলা প্রশাসনের
অভিযানে ২৬৮ মামলা প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে এক লাখ ৮২ হাজার ৫৯০ টাকা
জরিমানা করা হয়েছে। একজনকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়েছে।
অভিযানে সরকারি বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে সবচেয়ে বেশি অভিযান প্রয়োগ করা
হয়েছে কুমিল্লা শহরে। উল্লেখিত মামলায় সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ৩৮ মামলা
হয়েছে কুমিল্লা শহরে। অর্থদ- হয়েছে ১৯ হাজার ৪০ টাকা।
রবিবার
কুমিল্লা মহানগরীতে লডাউনের পরিস্থিতি ঘুরে দেখা যায়, সর্বাত্মক লকডাউনের
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে তুলনায় কুমিল্ল শহরের অধিকাংশ দোকানপাট
স্বাভাবিকভাবে খোলা ছিল। কিছু কিছু দোকানে একটি শাটার অর্ধেক খুলে বেচাকেনা
করেছেন ব্যবসায়ীরা। মাছ, মাংস, কাঁচাবাজারের বেচাকেনায় ক্রেতার ভিড় ছিল
অন্যান্য দিনের মতো। বাজারে গণপরিবহন চলাচল ও মানুষজনের চলাচলও ছিল
স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে ঢিলেঢালাভাবেই চলেছে সর্বাত্মক লকডাউন। বাজারে আসা
ক্রেতা-বিক্রেতাদের অধিকাংশ মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। অনেকে মাস্ক পরে তা
নামিয়ে রেখেছেন থুতনিতে। বেশির ভাগ মানুষদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির বালাই
নেই। এ অবস্থায় প্রশাসনের নজরদারি যে ছিল না, তা নয়। বাজারে
ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষ ও দোকানিরা প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে
আগেভাগেই নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে লকডাউনে। আবার প্রশাসনের মহড়া চলে গেলেই
আবারও স্বাভাবিক নিয়মে এসে করছেন বেচাকেনা ও কাজকর্ম। তবে এখানে সর্বাত্মক
লকডাউন ঢিলেঢালা হলেও পুলিশ প্রশাসনের প্রচেষ্টা ও নজরদারির কমতি ছিল না
বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এখানকার গণমানুষ স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অচেতন ও
লকডাউন সম্পর্কে উদাসীন হওয়ার কারণেই এমনটি ঘটছে।
ঘুরে আরও দেখা যায়,
লকডাউন কুমিল্লা সর্ববৃহৎ কাঁচা ও মাছ বাজার এবং রাণীর বাজারের কাঁচা বাজার
সড়কের উপর চলে আসায় কৃক্রিম যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে বাজারে সামাজিক
দূরত্ব নেই বললেই চলে। সচেতন নাগরিক সমাজ লকডাউনে রাজগঞ্জ ও রাণীর বাজারে
মানুষের জনসমাগম ও যানজট ছবি-ভিডিও ধারণ করে সমালোচনা করছেন।
লকডাউনে
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিম-উল আহসান
জানান, সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ প্রশাসনের প থেকে চেষ্টার কোনো
ক্রটি নেই। মানুষজন পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে লকডাউনে তাল মেলায়
আবার পুলিশ প্রশাসন চলে গেলেই আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর কারণ মানুষের
মধ্যে সচেতনতাবোধ নেই।
তিনি আরও জানান, কুমিল্লা সর্বাত্মক লকডাউন
কার্যকর করতে পুলিশসহ জেলা প্রশাসনের গত কয়েক দিনে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে
অভিযান চলে যাচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতায় জেলায় এখন পর্যন্ত ২৬৮ মামলাসহ দেড়
লাখ টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। মানুষের মাঝে গণসচেতনতার বৃষ্টি করতে
পুলিশ সব ধরণের প্রদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বাত্মক লকডাউন নিশ্চিতে সড়কে
সড়কে বাঁশ দিয়ে টানা দেওয়া হয়েছে। ২১টি সেন্টারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।