ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
এক মনিরের ‘চোর’ হয়ে ওঠার গল্প শোনাল পুলিশ
Published : Sunday, 23 May, 2021 at 12:00 AM
এক সময় কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস বিক্রি করতেন মনির হোসেন, যাদের ‘টোকাই’ নামে চেনেন অনেকে। তারপর এক ‘চোর’ সংশ্রবে এসে চুরি বিদ্যা শেখেন তিনি। আর চুরির টাকায় জমি কিনেছেন, ঘর তুলেছেন, দিয়েছেন দোকানও।
চট্টগ্রামে বেসরকারি একটি ব্যাংকে চুরির চেষ্টা এবং যন্ত্রাংশ বিক্রির একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২৮ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর মনির সম্পর্কে এসব কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনি থেকে শনিবার ভোররাতে মনিরের (৪০) সঙ্গে তার স্ত্রী খুকু মনিকে (২৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মনিরের সহযোগী অটোরিকশাচালক মো. মাহফুজকেও (৩০)।
মনিরের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ায়; কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তিনি চট্টগ্রাম নগরীতে থাকছেন।
পুলিশের ভাষ্য, বাসাবাড়িতে নয়, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই মনিরের চুরির লক্ষ্য। এজন্য রাতে মাহফুজের অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়ে রেকি চালাতেন তিনি। আর পাইপ বেয়ে ভবনের উঁচু তলায় ঢোকাও রপ্ত করেন তিনি।
চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার এএসআই অনুপ কুমার বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামে এসে নালায় বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়াতেন মনির। সেগুলো ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে চলতেন।
বছর সাতেক আগে পুলিশের তালিকাভুক্ত চৌধুরী নামের এক চোরের সঙ্গে মনিরের সখ্য গড়ে ওঠে। সেই চৌধুরীর মাধ্যমেই তিনি রপ্ত করেন বিভিন্ন ভবনে ঢোকা ও চুরির কৌশল।
অনুপ বলেন, “চৌধুরীর সাথে টাকা পয়সার বনিবনা না হওয়ায় বছর খানেক আগে আলাদা হয়ে যায় মনির। পরে সে একাই চুরি শুরু করে। মাসোহারা দিয়ে অটোচালক মাহফুজকে সাথে নেয় সে। রাত ১১টার পর থেকে মাহফুজের অটোরিকশায় করে শহরে ঘুরে বেড়ায়। মনির টার্গেট করা ভবনে ঢুকলে মাহফুজ আশেপাশে থেকে রেকি করে। পুলিশ কিংবা নিরাপত্তা প্রহরী দেখলে ফোন করে তা মনিরকে জানিয়ে দেয়।”
গত ১৮ মে গভীর রাতে মনির রাত দেড়টার দিকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে চুরি করতে ঢুকেছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
অনুপ বলেন, “সেখানে টাকার লকার খুলতে না পেরে উপরের তলায় বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্সে প্রবেশ করে দুইটি গ্রিল কেটে দুই রুমে প্রবেশ করে। প্রথম রুমে কোন টাকা না পেলেও পরের রুম থেকে সে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।”
তিনি বলেন, চুরি করতে পারলে মনির মোটা অঙ্কের ভাগ দিতেন মাহফুজকে। আর করতে না পারলে দৈনিক ৫০০ টাকা দিতেন।
খুলশী ও আকবর শাহ থানার দুটি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে মনির দুই বছর কারাগারে ছিলেন। ওই সময় মাহফুজ তাকে জামিন করানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করেন।
এএসআই অনুপ জানান, মনিরের কাছ থেকে একটি রেঞ্চ উদ্ধার করা হয়েছে। মূলত সেটি দিয়ে তিনি জানালার গ্রিল ভেঙে ফেলতে পারেন। ওই রেঞ্চ দিয়ে বিভিন্ন লকার খুলতেও পারদর্শী মনির।
মনিরের বড় ভাই আমির হোসেনও ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত চোর। তার একটি বড় দল ছিল। যাদের নিয়ে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে চুরি করতেন।
বিভিন্ন সময়ে আমির গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন। এ বছরের শুরুতে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়েছিলেন আমির। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি মারা যান।
তবে মনির তার বড় ভাই আমির হোসেনের দলে ভেড়েননি বলে পুলিশ জানায়।
কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম ?উদ্দিন বলেন, মনির যে প্রতিষ্ঠানে চুরি করতে ঢুকতেন, সেখান থেকে খালি হাতে বের হতেন না।
“গত বছর মনির চকবাজার এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে চুরি করতে ঢুকে। সেখানে টাকা না পেয়ে বের হওয়ার সময় দুধ, ঘি চুরি করে নিয়ে যায়।”
যে মনির এক সময় বাতিল মালের দোকানে কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসপত্র বিক্রি করতেন, চুরি করে টাকা পেয়ে নিজেই একটি ভাঙ্গারির দোকান দিয়েছেন বলে পুলিশ জানায়।
ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, “চুরির টাকায় আকবর শাহ বিশ্ব কলোনিতে যে জায়গায় মনির থাকে, সেটি কিনেছে। সেখানে পাঁচটি সেমিপাকা ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়েছে। পাশাপাশি একটা ভাঙ্গারি দোকানও দিয়েছে।”
মনিরের বাসা থেকে টাকা উদ্ধারের সময় তার স্ত্রীর নামে একটি ব্যাংক হিসাবের চেক বই পাওয়া গেছে।
সে হিসাবে কত টাকা লেনদেন হয়েছে এবং তাদের আরও কোনো ব্যাংক হিসাব আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করা হবে বলে জানান ওসি।
জিজ্ঞাসাবাদে মনির পুলিশকে বলেছেন, গত রমজান মাসে তিনি কোনো চুরি করেননি। প্রতি রমজানেই তিনি এই বিরতি দেন।
ওসি নেজাম বলেন, “গত এক মাস রমজানের সময় সে চুরি করতে বের হয়নি। প্রতিবছরই সে একই কাজ করে। রোজার শুরুর আগে ও শেষে মূলত চুরি করে।”
প্রয়াত ভাই আমিরের জন্য মনির গত ২০ মে বাড়িতে মিলাদ পড়িয়েছেন, সেখানে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল, যাকে ‘জেয়াফত’ বলে।
এবারের চুরির টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে সেই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল বলে ওসি জানান।
বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্স নামে প্রতিষ্ঠানটি থেকে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা চুরি হয়েছিল মনিরকে গ্রেপ্তারের সময় ২৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ওসি বলেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চুরির সঙ্গে মনির জড়িত ছিল। তার কথায় গত এক বছরে কোতোয়ালি ও চকবাজার থানা এলাকায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে চুরি ও চুরির চেষ্টার তথ্য মিলেছে।
সে কারণে মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ।