ক্লিনিক থেকে নবজাতক ‘বিক্রি’, মালিকসহ গ্রেপ্তার ৫
Published : Tuesday, 25 May, 2021 at 12:00 AM
বাবা-মাকে ভুল বুঝিয়ে তাদের নবজাতক শিশুকে ‘বিক্রি’ করে দিয়েছিল ঢাকার আশুলিয়ার একটি ক্লিনিকের লোকজন; ছয় দিন পর সিরাজগঞ্জ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার নিউ মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- নিউ মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও চিকিৎসক মোস্তফা কামাল (৩৯), আবু হানিফ (৪০), হানিফ বিন কুতুব (৪২), মোহাম্মদ সুমন মিয়া (২৯) এবং ফয়েজুল নামে একজন, যিনি ৫০ হাজার টাকায় শিশুটিকে ‘কিনে’ নিয়েছিলেন ।
সাভার, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশের কয়েকটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে বলে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক জানান।
শিশুটির বাবা আবুল কালাম আজাদ সোমবার বলেন, গত ১৭ মে তার স্ত্রী শিখা বেগমের ব্যথা উঠলে তাকে তিনি ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়।
“রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন, নবজাতক উল্টো হয়ে আছে, মা ও শিশুর জীবন সঙ্কটাপন্ন, দ্রুত প্রসব করাতে হবে। তাতে রাজি হলে ক্লিনিকের এক নারীকর্মী পাশের ঘোষবাগ এলাকার এক বাড়িতে নিয়ে যায় আমার স্ত্রীকে। সেই বাড়িতে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় আমার স্ত্রী।”
কিন্তু এরপর চিকিৎসক ‘দুঃসংবাদ’ দেন জানিয়ে আবুল কালাম বলেন, “ডাক্তার বললো, আমাদের মেয়ে খুব বেশি হলে তিন দিন বাঁচতে পারে। ১৫ দিন বাঁচাতেও অনেক টাকা দরকার। এসব ভুল বুঝিয়ে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে যায়। পরে সন্তান ফেরত চাইলে তারা ৫৫ হাজার টাকা দাবি করে।”
শিশুটির মা শিখা বলেন, “আমি গার্মেন্টসে হেলপারের কাজ করি। আমি তো অত কিছু বুঝি না। উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ওই ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার মিলে আমার মেয়েকে নিয়ে যায়।”
উপ-পরিদর্শক এমদাদুল বলেন, বাচ্চা ফেরত না পেয়ে ওই দম্পতি থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরে জানা যায়, ক্লিনিকের লোকজন ৫০ হাজার টাকায় সিরাজগঞ্জের এক লোকের কাছে শিশুটিকে বিক্রি করে দিয়েছে। তখন সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ফয়েজুলের কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
“ফয়েজুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, অনেক চেষ্টা না করেও সন্তান না হওয়ায় তিনি এই পথ ধরেছেন। ক্লিনিকের লোকজনই তাকে বাচ্চার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।”
আশুলিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক পবিত্র কুমার মালাকার বলেন, “শিশুটিকে উদ্ধারে আমরা রোববার রাতেই সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রওনা দিই। সকালে নবজাতকসহ আশুলিয়া ফিরে আসি। বাচ্চা সুস্থ আছে।”
এঘটনায় শিশুটির বাবা অবুল কালাম আজাদ সোমবার মানব পাচার আইনে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন।