সংসদ ভবনে তালোয়ার নিয়ে হামলা পরিকল্পনার মামলায় আলোচিত ধর্মীয় বক্তা আমির হামজাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ। পলাতক আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা সংগ্রহসহ গ্রেফতার করা এবং অর্থদাতা ও মদদদাতাদের শনাক্তের লক্ষ্যে আমির হামজাকে রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করেছে পুলিশ।
আজ (মঙ্গলবার) তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান।
ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে এ রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘আসামি আমির হামজা এজাহারনামীয় আসামি আনসার আল ইসলামের সদস্য মো. আল সাকিবসহ অন্যান্যদের তার বক্তৃতার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্ধুদ্ধ করেছে এবং অত্র হামলা করার বিষয়ে ইন্ধন প্রদান করেছে মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। আসামি আমির হামজার কথিত উগ্রবাদী বক্তব্য ইউটিউবে দেখে পূর্বে গ্রেফতার আসামি সাকিব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করে পুলিশের গুলিতে শহীদ হবে মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে।’
আবেদনে আরও বলা হয়, ‘সে তথাকথিত জিহাদের নামে পবিত্র কোরআন শরিফ ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করে উগ্রবাদী বয়ান দেয় এবং যুব সমাজকে উগ্রবাদ সমর্থনে ইন্ধন দেয় ও উদ্ধুদ্ধ করে। এছাড়া তার এই উগ্রবাদী বয়ানের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে উগ্রবাদের প্রচার ও প্রসারে লিপ্ত রয়েছে।’
এমতাবস্থায় মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যয়বিচারের স্বার্থে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন, পলাতক অপরাপর আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা সংগ্রহসহ গ্রেফতার করা এবং অর্থ ও মদদদাতাদের শনাক্তের লক্ষ্যে আসামি আমির হামজাকে রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ডের প্রয়োজন।
এর আগে, সোমবার বিকেলে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের ডাবিরাভিটা গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে হামজাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি দল।
এ বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমির হামজার বিরুদ্ধে সিটিটিসির তদন্তাধীন একটি মামলা রয়েছে।’
পুলিশের দাবি, আমির হামজা ওয়াজ মাহফিলের নামে ইসলামের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। ইউটিউবে ছড়ানো তার বেশকিছু বক্তব্য উগ্রবাদে উস্কানিমূলক, যা শুনে কিশোর-তরুণরা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি নাশকতার মামলায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যান আমির হামজা।
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, তলোয়ার নিয়ে সংসদ ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টায় গত ৫ মে সাকিব নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। সাকিবকে গ্রেফতারের পর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় সাকিব ছাড়াও আলী হাসান ও মাহমুদুল হাসান গুনবী নামে দুজনকে আসামি করা হয়।
কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক ভাষায় ওয়াজকারী আমির হামজার জন্ম ১৯৯১ সালে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে আল-কোরআনের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তিনি।
গত বছর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর আমির হামজা ক্রমাগতভাবে মাস্ক না পরতে উৎসাহ দিয়ে আসছিলেন। তখন তিনি বলেন, ‘করোনা এসেছে ইসলামে অবিশ্বাসীদের শায়েস্তা করতে’। তিনি এমনও বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে কারও করোনা হবে না।’
এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলে হামজা তার মতো করে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘এই বক্তব্যের আগে পরে তিনি আরও অনেক কিছু বলেছেন। সেগুলো প্রচার না হওয়ায় তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।’