ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ভোজ্যতেলের দাম আবার বাড়ছে
Published : Wednesday, 26 May, 2021 at 12:00 AM
বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বাজারে আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দিয়েছেন। অচিরেই একটি সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে বাণিজ্য সচিব জানিয়েছেন।
চলতি মে মাসের শুরুতেই লিটারে দুই টাকা বাড়িয়ে ভোজ্যতেলের দাম সর্বোচ্চ ১৪১ টাকা (বোতলজাত) নির্ধারণ করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তখন মিল মালিকদের দাবি ছিল প্রতি লিটার ১৪৪ টাকা নির্ধারণের। তবে রমজান মাস বিবেচনায় তখন ব্যবসায়ীদের ধৈর্য ধরতে বলেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক কম। দাম না বাড়ালে ব্যবসায়ীরা নতুন করে এলসি খুলতে পারবে না। তাহলে সামনে কোরবানির ঈদে একটা সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
দাম কত বাড়ানো উচিৎ- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করে বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রাখতে হলে প্রতি লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানো উচিৎ।
“আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে থেকে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সেখানে একটি দাম উল্লেখ করা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে কী সিদ্ধান্ত আসে সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাফর উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববাজারেও তেলের দাম নতুন করে বেড়েছে। সেই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয় তাদের (ব্যবসায়ীদের) প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। অচিরেই একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম প্রায় ১৬০ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। সেই হিসাবে দেশের বাজারে আরেক ধাপে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা রয়েছে।”
তিনি জানান, এক বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫২ টাকা ১১ পয়সা; বর্তমানে সেই দাম ১৩৫ টাকা ৮৪ পয়সা। আর দেশীয় বাজারে সর্বশেষ মূল্য ১৩০ টাকা। এক বছর আগে দেশে ভোজ্য তেলের দাম ছিল ৮৮ থেকে ৯৩ টাকা।
মঙ্গলবার ঢাকার কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আর খুচরা মুদি দোকানে তা বিক্রি হচ্ছিল প্রতি লিটার ১২০ টাকায়, প্রতিকেজি ১৩১ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মঈনুদ্দিন জানান, গত এক মাস ধরেই তেলের দাম লিটারে ১/২ টাকা করে উঠানামা করছে।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো জানান, দামের ওঠানামা আগামী দুই মাস চলবে বলে তার ধারণা।
বর্তমানে মিলগেইটে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১৫ টাকা ৭০ পয়সা বা প্রতিকেজি ১২৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে লিটারে একটাকা করে বাড়লেও তা আবার কমেছে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজার এখন ঊর্ধমুখী। সেপ্টেম্বরের দিকে আমেরিকার বাজারে নতুন মওসুমের সয়াবিন তেল আসবে। জুলাইয়ের দিকে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলে পাম তেলের নতুন পণ্য আসবে। এই দুটি বাজারই ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনুবিভাগের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ভোজ্যতেলের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। ২০২০ এর পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি দেখা হচ্ছে।
সেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার ৯৫ ভাগেরও বেশি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিতে স্থানীয় বাজারেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যেই পরিমাণে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, স্থানীয় বাজারে সেই পরিমাণে বাড়েনি।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের বাজার অস্থিতিশীল থাকায় মিল ও ভোক্তাস্বার্থ বিবেচনায় গত ফেব্রুয়ারিতে ভোজ্যতেলের মূল্য সীমা নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রমজান মাসে ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে গত ১০ এপ্রিল সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করে এনবিআর।