লকডাউনে যাত্রী নেই, দুশ্চিন্তায় রিকশাচালকরা
Published : Saturday, 3 July, 2021 at 12:00 AM
কঠোর
লকডাউনে রাস্তায় যাত্রী না থাকলেও রিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন শফিউল্লাহ। সারা
শরীর তার বৃষ্টিতে ভেজা। বললেন, “বৃষ্টি-বাদল কথা না, রিকশা না চালাইলে
খামু কী?”
শুক্রবার সকালে ঢাকার মালিবাগ মোড়ে শফিউল্লাহর মত এরকম আরো অনেক রিকশা চালককে দেখা গেল, যারা রাস্তায় বেরিয়েছেন পেটের দায়ে।
করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ
দিয়েছে সরকার। অফিস-আদালত, গণপরিবহন, শপিংমলসহ সবকিছুই বন্ধ। তবে রিকশা
চলার অনুমতি আছে।
লকডাউনে এমনিতেই রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। তার ওপর শুক্রবার
ছুটির দিন, বৃষ্টিতে লোকজন ঘর থেকে বের হয়নি। ফুটপাতে মানুষের চলাচল নেই,
কাঁচা বাজারেও নেই ভিড়।
শফিউল্লাহ বলেন, “হেই ভোরে বেরইছি, যাত্রী পাই
না। তিন বার বৃষ্টিতে ভিজছি। দুইটা ক্ষ্যাপে ৬০ টাকা পাইছি। দুপুর পর্যন্ত
এইটা কামাই। কন খামু কি? নিজের বউ-পোলা নিয়ে চলমু কেমনে?”
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির কথা বলায় শফিউল্লাহ যেন খনিকটা বিস্মিত হলেন।
“স্যার গো... করোনা হয় না, জ্বর হয় না, আমাগো ইস্টিল বডি। এই ভাইরাস এই গতরে বেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না, মইরা যায়।”
শফিউল্লাহর মত রিকশা চালক ইসমাইলেরও একই কথা, লকডাউনে যাত্রী পাওয়া ‘ভাগ্যের ব্যাপার’।
“রিকশায় যাত্রী দেখলেই পুলিশ থামায়, জিজ্ঞেস করে কই থেকে, কেন। সেইজন্য অনেকে রিকশায় উঠতে চায় না।”
ইসমাইল
সকাল থেকে ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টিতে ভিজে ১০০ টাকা রোজগার করার কথা জানালেন।
মা-ভাই-স্ত্রীকে নিয়ে ৬ জনের সংসার কীভাবে চালাবেন তা নিয়েই তার
দুশ্চিন্তা। কিছুক্ষণ পরপর গুনে দেখেন, কত টাকা হল, কী নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।
“স্যার বৃষ্টিতে টাকা ভিজে যায়। কিছুক্ষণ পর পর কত টাকা আছে গুনে দেখি। কামাই কম, চিন্তায় আছি।”
কাকরাইল
মোড়ে ভবঘুরে আবুল বৃষ্টির দিনে ঘুমিয়ে সময় পার করছেন। বৃহস্পতিবার রাতে
পেটে কিছু জুটলেও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কিছুই খাওয়া হয়নি।
“সরকার
লকডাউন দিছে কিন্তু আমাদের যাদের কিছুই নাই, তাদের কি হইব? ফুটপাতে বইসা
থাকলে ভিক্ষা পাইতাম, সেইটা বন্ধ। মানুষই নাই, ভিক্ষা দিব কে? আমরা খামু
কি? আপনি কন ভাই।”
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে মালিবাগ, পল্টন, কাকরাইল,
ফকিরাপুল, বিজয়নগর ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশের চেকপোস্ট আছে, ব্যারিকেড আছে,
তবে যানবাহনে তল্লাশি হচ্ছে আগের দিনের তুলনায় কম।
কোভিড-১৯ এ দেশে গত ৬
মাসে মারা গেছে ৬ হাজার ৯৪৪ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে এপ্রিল
মাসে। দেশে শনাক্তের বিপরীতে এখন পর্যন্ত মৃতের হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার রেকর্ড ১৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।