ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বাপ-দাদার পেশা মৃৎশিল্পকে আঁকড়ে আছেন তাঁরা
Published : Saturday, 7 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 07.08.2021 1:02:40 AM
বাপ-দাদার পেশা মৃৎশিল্পকে আঁকড়ে আছেন তাঁরা শাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
রামধন পালের (পটল) বয়স ৭২ বছর। তিনি দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের কুমোরপাড়ার বাসিন্দা। এ বয়সেও বাপ-দাদাদের পেশা মৃৎশিল্পকে আগলে রেখেছেন তিনি। দুলাল পাল, সঞ্জিত পাল ও রঞ্জিত পাল নামে তাঁর তিন ছেলে রয়েছেন। এর মধ্যে দুলাল পাল ও রঞ্জিত পাল এ মৃৎশিল্পের কারিগর।
 এ শিল্পের কারিগর রামধন পাল (পটল) এ প্রতিবেদককে বলেন, অভাব-অনটনে এ শিল্পে জীবন চালাতে হিমসীম খেতে হচ্ছে। বাবার থেকে কাজ শেখেছি। আমার বাবা আমার দাদা থেকে কাজ শেখেছেন। এভাবে বংশানুক্রমে এ কাজ চলে আসছে। বর্তমানে মৃৎশিল্পের সোনালী যুগ হারিয়ে গেছে। গোমতীর নদীর ভরা যৌবনে নৌকা বোঝাই করে মালামাল নিয়ে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন বাবা। ছোট বেলায় বাবা আমাকে সঙ্গে নিতেন। বাবা মারা যাওয়ার পর আমি এ পেশার হাল ধরি। আমার সন্তানদেরকেও সাথে নিয়ে আমি নদীতে করে বিভিন্ন হাটে হাড়িপাতিল বিক্রি করতাম। এখন মৃৎশিল্প দিন দিন বিলিন হয়ে যাচ্ছে। অভাব-অনটনে মৃৎশিল্পের পেশাও বদল করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন বংশের অনেকেই।   
বুধবার বিকালে রসুলপুর ইউনিয়নের কুমোরপাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কুমোর পাড়ায় বংশ পরম্পরায়, কয়েক’শ বছর ধরে মাটি দিয়ে বাহারি ডিজাইনের তৈজসপত্র, পুতুল, হাড়ি-পাতিলসহ নানা সৌখিন জিনিসপত্র তৈরী করে, জীবিকা নির্বাহ করে আসছে ২৫টি পরিবার। বর্তমানে এঁেটল মাটির সংকট, জ¦ালানি কাঠসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, বিপাকে পড়েছে এ শিল্পের কারিগররা। পাশাপাশি প্লাস্টিক ও সিলভারের তৈরি পণ্যের কাছেও হার মেনেছে, মাটির তৈরি জিনিসপত্র। ফলে বদলে গেছে কুমোরপাড়ার চিরচেনা সেই ব্যস্ততা। তবুও বাপ দাদার এই শৈল্পিক পেশাকে আঁকড়ে আছেন তাঁরা।
৪০ বছর ধরে বিভিন্ন হাটে হাড়ি-পাতিলসহ নানা তৈজসপত্র বিক্রি করে আসছেন রসুলপুর বাজারের খোকন পাল।  খোকন বলেন, অগ্রাহায়নে নবান্নের উৎসব এলে গ্রামে-গঞ্জে ময়ালে গিয়ে ধান ও চালের বিনিময়ে হাড়িপাতিল নিত গাঁয়ের গৃহবধুরা। আমরা কাঁধে হাড়ি পাতিলের ভাড় নিয়ে ঘুরতাম এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। দিন শেষে কাঁেধর ওড়া পুরো করে কাঁচা ধান নিয়ে আসতাম। এভাবে চলতো আমাদের সংসার। এখন মাটির সংকট  আর  আধুনিকতার উৎকর্ষে হারিয়ে যাচ্ছে এ মাটির শিল্প।     
কুমোর পাড়ার চারু বালা পালের বয়স আনুমানিক ৭৫। তিনি মৃৎশিল্পের কারিগর। চারু বালা পাল বলেন, বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের ব্যবসা ছিল মাটির হাড়ি পাতিল তৈরি করা। এ বাড়িটি এ এলাকায় কুমোর বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এমনকি এ পাড়াকে আজও মানুষ পালপাড়া বলেই ডাকে। বাপ-দাদারা নৌকাযোগে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করতেন মাটির তৈরি তৈজসপত্র। একসময় এ জিনিসপত্রের চাহিদা ছিল অনেক। আজ এর চাহিদা শূন্যের কোঠায়। চাহিদা কমে যাওয়ায় এ পেশায় আজ টিকে থাকাই দায় হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন হারিয়ে যাবে এ পেশা। মাটির স্বল্পতা, আধুনিকতার ছোঁয়া এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবকে দায়ী করছেন এ শিল্পের কারিগর চারু বালা।   
 এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিব হাসান বলেন, এ শিল্পের কারিগররা যাতে সরকারি সহযোগিতা পান সে ব্যবস্থা করা হবে। সরকারের কুমোর সম্প্রদায়কে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে সহায়তা করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে মাটির শিল্পের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।