ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
সংক্রমণ কমলেও মৃত্যু বেড়েছে কুমিল্লায়
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যাতীত অক্সিজেনের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ন
Published : Saturday, 7 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 07.08.2021 1:04:48 AM

সংক্রমণ কমলেও মৃত্যু বেড়েছে কুমিল্লায়তানভীর দিপু:
কুমিল্লায় কমে আসছে করোনার সংক্রমণ হার কিন্তু বাড়ছে মৃত্যু। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত দুই দিনে ২৯ জনের প্রাণহানি হলেও সংক্রমণ হার কমে এসেছে ৩২ শতাংশের নিচে। সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় কুমিল্লায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছেন ৫৬৩ জন এবং মৃত্যু বরন করেছেন ১৪ জন। গত ১০ দিনে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১১৪ জন, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে মৃত্যুবরণ করছেন ১১ জন। জেলায় এখন মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭৮৬ জন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত ২০ জুলাই মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ২১ হাজার ৯৬৫ জন, প্রাণহানির ছিলো ৬১৫ জনের এবং করোনা থেকে সুস্থ মানুষের সংখ্যা ছিলো ১৩ হাজার ৪২৮ জন। ওই দিন মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ২ হাজার ৩২১ টি। এর ১৫ দিন পর গত ৫ আগষ্ট পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩২ হাজার ৭৮৭ জন, যার পার্থক্য ১০ হাজার ৮২২ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ১৭ হাজার ৫৬০ জন, মোট নমুনা পরীক্ষা ১ লাখ ৩১ হাজার ৯০৬ এবং মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭৭২ জন। তবে যে হারে করোনার নমুনা পরীক্ষায় হার জেলায় বেড়েছে তা নিয়ে ইতিবাচক প্রভাব দেখছেন স্বাস্থ্যবিদরা।
কুমিল্লায় সংক্রামক রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সাবেক সমন্বয়ক ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরীর মতে, যত বেশি পরীক্ষা বাড়বে প্রতিরোধ তত বেশি সহজ হবে। কারণ তখনই জানা যাবে কে আক্রান্ত কে আক্রান্ত নয়। সে অনুযায়ী আইসোলেশন-কোয়ারেন্টিন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে।
মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে তিনি জানান, এখন যারা মৃত্যুবরন করছে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তারা অনেক আগেই আক্রান্ত হয়েছেন। পরীক্ষা না করার কারনে তারা জানতেন না যে তিনি আক্রান্ত, যে কারণে শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক অবস্থায় পৌঁছালে তারা চিকিৎসা নিয়েছেন কিংবা হাসপাতালে এসেছেন যে কারনে তাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে দেরীতে এবং অনেকেই মৃত্যুবরন করেছেন। আর যারাই মৃত্যুবরন করছেন তারা বেশীর ভাগই হয়তো কোন দূরারোগ্যব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন যে কারনে করোনা ভাইরাসের প্রভাবটা তাদের উপর আরো বেশী পড়েছে।
এদিকে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে সাথে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। করোনা আক্রান্ত হয়ে শ^াসকষ্ট হলেই প্রয়োজন পরছে অক্সিজেনের। অক্সিজেন সেচুরেশন কমতে থাকা রোগীদের জন্য শুধু হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম ছাড়াও, বাসাবাড়িতেও দেয়া হচ্ছে সিলিন্ডার অক্সিজেন।
ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরীর মতে, করোনায় আক্রান্ত হলেই অক্সিজেনের প্রয়োজন পরবে এমন চিন্তা করে অনেকেই সিলিন্ডার ভরতি অক্সিজেন বাসায় নিয়ে মজুদ রাখছেন। কিন্তু এতে করে যাদের অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন তাদের অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। কারণ আমাদের এই অঞ্চলে নিজস্ব অক্সিজেন রিফিল সেন্টার নেই। তাই করোনা আক্রান্ত হলেই অক্সিজেন দরকার হবে এমন মনে করে অক্সিজেনের মজুদ ঠিক নয়। এছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অক্সিজেন নেয়া মোটেও ঠিক নয়। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত চাপের অক্সিজেনের সরবরাহ রোগীর জীবনের জন্য হুমকিও।
রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধির বিপরীতে ব্যাপক হারে করোনার নমুনা পরীক্ষাকেই ইতিবিাচক হিসেবেই দেখছেন জেলা সিভিল সার্জন। সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন জানান, যত বেশী নমুনা পরীক্ষা তত বেশি নিশ্চিত হওয়া যাবে সংক্রমণের মাত্রা ও এলাকা নিয়ে। সে হিসেবে আইসোলেশন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা গেলে নেতিবাচক ফলাফল কমিয়ে আনা যাবে। আমরা যত বেশি পারছি নমুনা পরীক্ষা করছি। এছাড়া কুমিল্লার বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে যা পরবর্তী সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানি কমিয়ে আনবে। তাই যতবেশী টীকাগ্রহিতা বাড়বে তত বেশি ক্ষতি থেকে বাঁচা যাবে।