আর্থিক অবস্থা খুবই বাজে। ফাইনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে বিধি-বিধানের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খায় না। যে কারণে সব কিছু ঠিক থাকা সত্বেও লিওনেল মেসিকে ধরে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা। ছেড়ে দিতে হয়েছে। সেই মেসি এখন প্যারিসে, পিএসজির খেলোয়াড়। এরই মধ্যে যাবতীয় চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গেছে। মেসিকে প্রেজেন্টেশন দিয়েছে পিএসজি। দলটির জার্সি গায়ে শুধু মাঠে নামার অপেক্ষা।
মেসিকে ধরে রাখতে না পারার পরই বার্সেলোনার আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন উঠে গেছে। আসলেই কী বার্সার ভেতরে ভেতরে সর্বনাশ ঘটে রয়েছে? কত বড় সমস্যার মুখোমুখি যে তারা, মেসিকে ধরে রাখার শেষ চেষ্টাতে গিয়ে হেরে যেতে হলো?
এ নিয়ে যখন চারদিকে সমালোচনার ঝড় বইছে, তখন সেখানে আগুনে ঘি ঢালার মত কাজ করলেন বার্সার সাবেক সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তেম্যু। নানা পয়েন্ট উল্লেখ করে তিনি দাবি করলেন, বার্সেলোনার এই খারাপ পরিস্থিতির জন্য পুরোপুরি দায়ী হচ্ছেন বর্তমান সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা।
বার্তেম্যুর অভিযোগের মুখে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই ক্লাবের পুরো আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে হাজির হলেন বার্সার বর্তমান সভাপতি। তিনি সাবেক সভাপতি বার্তেম্যুর অভিযোগকে তো পুরোপুরি উড়িয়ে দিলেনই। সে সঙ্গে মিডিয়ার সামনে জানিয়ে দিলেন, করোনা মহামারির কারণে বার্সেলোনার ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১.৩৫ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা)।
এই বিশাল পরিমাণ ঋণের জন্য লাপোর্তা পুরোপুরি দায়ী করলেন বার্তেম্যুর নেতৃত্বাধীন কমিটিকেই। কারণ, গত বছরের শেষ মুহূর্তে এসে পদত্যাগ করেন বার্তেম্যু। লাপোর্তা দ্বিতীয়বার বার্সার সভাপতি নির্বাচিত হন গত মার্চে। এরপর তো ৫-৬ মাসে এত বিশাল পরিমাণ ঋণ তিনি করেননি! বরং, বার্সেলোনার বর্তমান বাজারমূল্য এতটাই তলানীতে গিয়ে নেমেছে যে, সেটা বিস্ময়কর। বার্সার যা বাজার মূল্য থাকার কথা, তার চেয়ে এখন সেটা ৪৫১ মিলিয়ন ইউরো তথা ৪৫১০ কোটি টাকা কম।
লাপোর্তা জানিয়ে দিয়েছেন, বার্সেলোনা এই বছরটিই শুরু করেছে ১ বিলিয়ন ইউরো ঋণের মধ্যে থেকে। এরপর মার্চ মাসে তিনি যখন বার্সার দায়িত্ব নেন, তখন দেখেন ফান্ড পুরো ফাঁকা। এ নিয়ে লাপোর্তা বলেন, ‘আমরা যখন ক্লাবের দায়িত্ব নিই, তখন আমাদেরকে বলা হয় অন্তত ৮০ মিলিয়ন ইউরো ঋণ নেয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত গোল্ডম্যান সাকস এই ঋণের অনুমোদন দেয়। এর কারণ ছিল, খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেয়ার মত কোনো অর্থই তখন বার্সার ফান্ডে নেই। এ পরিস্থিতি তো আমরা তৈরি করিনি। আগে থেকেই তৈরি করা ছিল।’
আগের বোর্ড যে বার্সেলোনা খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিল, তা ছিল পুরোপুরি ভুয়া। লাপোর্তা বলেন, ‘আগের কমিটি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক কমিয়ে দেয়ার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু আমরা দায়িত্ব নিয়ে দেখি বিষয়টা ভুয়া। মিথ্যা কথা বলা হয়েছিল। আমরা দেখি, পারিশ্রমিক ছাড়াও বোনাস এবং বিভিন্ন খাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরো ঢেলে দিতে হচ্ছে। যার কোনো নিয়ন্ত্রণই ছিল। অনিয়ন্ত্রিত ব্যায় করা হচ্ছিল শুধু।’
খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের বিষয়টি উল্লেখ করে লাপোর্তা বলেন, ‘বার্সার যা ইনকাম, তার চেয়ে ১০৩ ভাগ অর্থ চলে যায় খেলোয়াড় এবং কর্মকর্থাদের পারিশ্রমিক পরিশোধেই। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য যে সব ক্লাব রয়েছে, তাদের চেয়ে যায় ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেশি।’
এ পরিস্থিতির জন্য কেউই দায়িত্ব নিতে রাজি নয় জানিয়ে লাপোর্তা বলেন, ‘কেউই এর জন্য দায় স্বীকার করে নিতে রাজি নয়। অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুণ। বার্সার এখনকার বাজারমূল্য ৪৫১ মিলিয়ন ইউরো (৪৫১০ কোটি টাকা) কম। আর ঋণ রয়েছে ১.৩৫ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা)।