
মুজিবুর রহমান দুলাল, লাকসাম ||
কুমিল্লার লাকসামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম। লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবকাঠামোগত এবং জনবল সংকট থাকা সত্বেও এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয় করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি নানা সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে লাকসামে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ, আন্ত:বিভাগ এবং বহি:বিভাগের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম লাকসামে স্বাস্থ্যখাতের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অর্জন এবং এক অনন্য সুন্দর সফলতা বলে আখ্যা দিচ্ছে স্থানীয়রা।
মো. নুরুল ইসলাম নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দৃশ্যপট একেবারে পাল্টে দিয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তিনি এখানে যোগদানের পর থেকে হাসপাতালে রোগীদের খাবার-দাবার, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ফুল-ফলাদির বাগান সৃজনের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়নসহ নানামূখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তাছাড়া, রাতোব্দী এই কর্মকর্তাকে হাসপাতালে কর্ম ব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কিভাবে আরো সহজে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যায়। এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শ প্রদান করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম। এখানের স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের কর্মকর্তার সৃজনশীল ভাবনা এবং উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর হোসেন জানান, লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিকগুলো নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ এবং সকলের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে এখানের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম অপরিসীম ভূমিকা পালন করছেন।
তিনি আরো জানান, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে গর্ভবতী মহিলাদের প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারী অর্থাৎ স্বাভাবিক সন্তান প্রসব’র ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এই সেবা প্রদানে সেখানে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মীদের কঠোর দিক নির্দেশনা প্রদান এবং মনিটরিংয়ে রাখছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, করোনাকালে এখানে মোট ৬ হাজার ৮৩৮ জনের করোনার নমূনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তন্মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৮৮ জন। আক্রান্ত ২৬৪ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ২২৮৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ২২৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৪১ জন। এই উপজেলায় মোট সংক্রমণের হার ৩৪ দশমিক ৯২ এবং মোট মৃত্যু হার ১ দশমিক শূন্য ০৭।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত করোনা টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গণটিকা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ টিকা প্রদান কার্যক্রম সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখানে করোনার টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫৮ জন। এ পর্যন্ত রেজিষ্ট্রেশন করেছেন ১ লাখ ৮ হাজার ২২১ জন।
প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজসহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৭২১ জন। তন্মধ্যে ৭৫ হাজার ৮৮৯ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৩৩ হাজার ৮৩২ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শতকরা ৬৬ ভাগ টিকা প্রদান করা হয়েছে।
লাকসামের একজন প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের নেতা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে এখানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্ব ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় করোনা আক্রান্তদের জরুরী সেবা, করোনার নমূনা পরীক্ষা এবং নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সেবা প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করেছেন এখানের চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীসহ সকল কর্মচারিবৃন্দ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পারিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম বলেন, স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি’র স্বাস্থ্য সেক্টরের প্রতি অভিভাবকসুলভ মনযোগ এবং বটবৃক্ষের ছায়ার মতো সান্নিধ্য, সকল চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতায় এ সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা আগামীতেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে লোকবল সংকট রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কিছু কিছু পদ রয়েছে শূন্য। এখানের স্বাস্থ্য সেবা আরো জোরদার করতে শূন্য পদগুলোতে জনবল নিয়োগ করা অত্যন্ত আবশ্যক। তিনি লোকবল সংকট দূরিকরণে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান।
এই ব্যাপারে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ কে এম সাইফুল আলম বলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কাজ করায় লাকসামে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সফলতা অর্জন সক্ষম হয়েছে।